নড়াইল-২ আসনে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ২ ডজন প্রার্থী

0
1115

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের হিড়িক পড়েছে। প্রায় দুই ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তোড়জোড় শুরু হয়েছে জাতীয় পার্টিতেও। নির্বাচনে দলের অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় থাকলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতারাও ভেতরে ভেতরে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিস্তারিত আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোর্টে, কমবেশি সম্ভাব্য প্রার্থীরা বাড়িয়েছেন সামাজিক অনুষ্ঠানে নিজেদের উপস্থিতি। এলাকার অসহায়-গরিব মানুষকে সহযোগিতা করা ছাড়াও রাস্তার মোড়ে, হাট-বাজার, বাস স্ট্যান্ড, খেয়াঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ছবি সংবলিত প্রার্থীদের ডিজিটাল ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রার্থীদের গণসংযোগের দৃশ্য পোস্ট করা হচ্ছে। তৃণমূলের পাশাপাশি কেন্দ্রের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন নেতারা। নড়াইল সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে নড়াইল-২ আসনে ভোটার সংখা ৩ লাখ ২৩৭ জন। আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আগামী নির্বাচনে দলের সবাই একজোট হয়ে কাজ করলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। তবে বিএনপির দাবি, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে জয় হবে তাদেরই। গত সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ আসনে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের দুই ডজন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা হলেন- নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল পৌরসভার সাবেক মেয়র নিজামউদ্দিন খান নিলু, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শিকদার আ. হান্নান রুনু, জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম মুন, লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু, জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি এসএম আসিফুর রহমান বাপ্পি, জেলা আওয়ামী লীগের অপর সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আইয়ুব আলী, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, কার্যকরী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসকে আবু বাকের, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিদ্দিক আহম্মেদ ও মোহাম্মদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সাইফ হাফিজুর রহমান খোকন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ হুমায়ুন কবির, নড়াইল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও নড়াইল সদর পৌরসভার মেয়র মো. জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট গোলাম নবী, ঢাকার নড়াইল সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ হাসান ইকবাল, নড়াইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাসানুজ্জামান, শেখ মো. আমিনুর রহমান হিমু, নড়াইল পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান তাপস, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাসুদেব ব্যানার্জি, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সদস্য মুন্সি নজরুল ইসলাম, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য লতিফা পারভীন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক রাশেদুল বাসার ডলার। বর্তমান এমপি ও নড়াইল জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান ছাড়াও ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন- জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, জেলা জাসদের (আম্বিয়া) সভাপতি অ্যাডভোকেট হেমায়েত উল্লাহ হিরু এবং জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম। কথা হয় এমপি অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে ১৪ দলীয় জোটের অনেক প্রার্থী রয়েছেন। ওয়ার্কার্স পার্টিরও প্রার্থী সংখ্যাও একাধিক। জোটের মনোনয়ন দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। দল আমাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। তিনি বলেন, যাদের কোনোদিনই এলাকার দুঃসময়ে পাওয়া যায় না, নির্বাচন এলে তাদের তৎপরতা বাড়ে।’ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু বলেন, ‘আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী। সাধারণ ভোটাররা আমাকে চান। তবে শেখ হাসিনা আমাকে কিংবা যাকেই মনোনয়ন দেবেন, আমি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে অবশ্যই দল মনোনীত প্রার্থীকে জয়লাভে আপ্রাণ চেষ্টা করব।’আ’লীগ নেতা মঞ্জুরুল করিম বলেন, ‘দীর্ঘকাল ধরে দলের সঙ্গে আছি। সংগঠনের স্বার্থে এবং আসনটি যাতে হাতছাড়া না হয় সেজন্য আশা করি জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেবেন। ফলে আসনটি আ’লীগের দখলে থাকবে ইনশাআল্লাহ।’লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শিকদার আ. হান্নান রুনু বলেন, ‘বহু নির্যাতনের শিকার হয়ে আ’লীগকে লোহাগড়ায় একটি শক্ত অবস্থানে দাঁড় করিয়েছি। আমাকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিলে সহজেই এ আসনে জয়লাভ করা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস।’ অপরদিকে, নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মনে করছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে দলের প্রার্থী যিনিই হন না কেন তারা চমক দেখাতে পারবেন। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ খসরুজ্জামান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুল কাদের সিকদার, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও নড়াইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জুলফিকার আলী মণ্ডল, নড়াইল সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন সিকদার, বিএনপি নেতা মেজর (অব.) মঞ্জুরুল ইসলাম প্রিন্স। এছাড়া বাংলাদেশ গণসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি মুফতি শহিদুল ইসলাম, এনপিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আগামী নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে কথা হয় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের সিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের মাঠে-ময়দানে যেতে বাধা দিচ্ছে, দল গোছাতে দিচ্ছে না। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে দলের সম্মান রক্ষা করার চেষ্টা করব।’বিএনপি নেতা ও সাবেক মেয়র জুলফিকার আলী মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, ‘দেশে দমন-পীড়নের রাজনীতি বিদ্যমান। এরপরও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি হলে এবং আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নড়াইল-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হবেন।’ এছাড়া অন্য দল বা জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির নড়াইল জেলা শাখার সাবেক সভাপতি শরীফ মুনীর হোসেন ও বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহম্মেদের নাম শোনা যাচ্ছে। অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ‘নড়াইল জেলা শহরে জাতীয় পার্টির বিশাল অফিস নিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। দেশের মানুষ এখন জাতীয় পার্টির পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। পল্লী বন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটেই আগামী সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠন করবে জাতীয় পার্টি। এজন্য দেশের প্রতিটি আসনে যোগ্য ও তৃণমূল সমর্থিত ব্যক্তিকেই মনোনীত করবে জাতীয় পার্টি। সে বিবেচনায় আমাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে বলে বিশ্বাস করি।’ অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলন থেকে দলের নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি এসএম নাসিরুদ্দিন এবং সহ-সভাপতি মাওলানা সামসুল হকের মধ্যে যে কোন একজন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here