দেলদুয়ার(টাঙ্গাইল)প্রতিনিধি:
সমস্যা আর সমস্যা। নানা সমস্যায় জর্জড়িত দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ডাক্তার, নার্স , আয়া, মালি , কুক মশালচি, নৈশ প্রহরী, অ্যাম্বুলেন্স এসবের সংকট তো রয়েছেই। এমনকি ওষুধেরও নেই চাহিদা মাফিক সরবরাহ। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন উপজেলার আড়াই লাখ জনগোষ্ঠি। রোববার সরেজমিনে হাসপাতাল পরিদর্শন এবং স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. মো. মিনহাজ উদ্দিন মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ সব তথ্য।
৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দেলদুয়ারে একমাত্র সরকারি হাসপাতাল। প্রায় আড়াই লাখ লোকের বসবাস এ উপজেলায়। সরকার এ বৃহৎ জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করেছেন এটি। ভবন হয়েছে, উদ্বোধনও হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় উপকরণ ও জণবল কিছুই আসেনি। এ সবের অভাবে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে এ এলাকার মানুষ। মা ও নবজাতক শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা নিতে দৌড়াতে হচ্ছে ১৩ কি.মি. দূরের টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকগুলোতে। সার্জিক্যাল ও মেডিকেল কনসালটেন্ট পদ দু’টি শূণ্য রয়েছে। ফলে গুরুতর রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না এখান থেকে। সাধারণ রোগীদেরও বিভিন্ন অযুহাতে রেফার্ড করে পাঠিয়ে দেয়া হয় জেলা সদরে।
টিএইচও ডা. মিনহাজ উদ্দিন জানান, ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নিত হলেও তার কোনো কার্যক্রম নেই। এখনো ৩১ শয্যা হিসাবেই চলছে। এখানে চিকিৎসকদের ১৭ টি পদ থাকলেও আছেন মাত্র ১৩ জন। ৪ জন আছেন ডেপুটেশনে। বর্তমানে ৭ জন মেডিকেল অফিসার পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও)’র পদ শূণ্য রযেছে দীর্ঘদিন ধরে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীও চাহিদা অনুযায়ী নেই। ঝাড়–দার ৫ জনের মধ্যে আছে ৪ জন। ওয়ার্ডবয় ৩ জনের মধ্যে ২ জন। এমএলএসএস ৪ জনের মধ্যে ২ জন। কুক মশালচি ২ জনের মধ্যে ১ জন। আয়া, মালি ও নৈশ প্রহরীর পদ থাকলেও কোনো জণবল নিয়োগ দেয়া হয়নি ওই সব পদে। অ্যাম্বুলেন্স না থাকার কারনে রোগীরা এ সুবিধা থেকেও বঞ্ছিত হচ্ছেন। ওষুধ সরবরাহও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এসব কারনে ইচ্ছা থাকলেও শতভাগ সেবা দেয়া যাচ্ছে না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লেখা লেখি করেও কোনো ফল হচ্ছে না বলে জানান টিএইচও।
রোগী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ চিকিৎসা সেবা নিতে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা রোগীদের চেয়ে ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন বেশি। চিকিৎসা না দিয়ে জেলা সদরে স্থানান্তরই তাদের বেশি পছন্দ। এছাড়া জরুরী বিভাগে ব্রাদার ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দ্বারাই ব্যবস্থাপত্র, সেলাই ও ড্রেসিংয়ের কাজ করানো হয়। ব্যবস্থাপত্র দেয়ার সময় ওষুধ কোম্পানীর লোকজন নির্দিষ্ট কোম্পানীর ওষুধ লিখতে জরুরী বিভাগে দায়িত্বরতদের প্রভাবিত করেন। ফলে রোগীর অভিভাবকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হন।
পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকা স্বত্বেও পাবলিক টয়লেট থেকে দুর্গন্ধ বেরোয়। রাতের বেলা ইনডোর ও আউটডোরে ডোরে বৈদ্যুতিক বাল্বের স্বল্পতার কারনে ভূতুড়ে অবস্থা বিরাজ করে। তাছাড়া দিনের বেলা গরু-ছাগলের উপদ্রপ তো রয়েছেই। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে টিএসও বলেন, আমি অল্পদিন হয় এখানে এসেছি। হাসপাতালে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছি। তবে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।