জগন্নাথপুরে মাদ্রাসা নিয়ে সংর্ঘষ : গ্রেফতার আতংকে পুরুষ শুন্য

0
979

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি :
জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা দরুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার নাম করনকে কেন্দ্র করে দু-পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের ১শ ১৮জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। শ্রীধরপাশা গ্রামবাসীর পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালিক গ্রুপের আবুল খয়ের বাদি হয়ে একই গ্রামের জাবেদ আলম কোরেশীকে প্রধান আসামী করে ৩৮জনের বিরুদ্ধে এবং আওয়ামী লীগ নেতা জাবেদ আলম কোরেশীর গ্রুপের পক্ষে মাহবুব আলম কোরেশী বাদি হয়ে আব্দুল মালিক গ্রুপের ফয়ছল মিয়াকে প্রধান আসামী করে ৮০জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ সংঘর্ষের পর শ্রীধরপাশা গ্রামে অভিযান চালিয়ে জাবেদ আলম গ্রুপের ৮জনকে আটক করে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরন করেন। উভয় পক্ষের মামলা দায়েরের পর আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের সাড়াঁশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে আব্দুল মালেক পক্ষের ৬৪জন আসামী আদালত থেকে জামিন নিলেও অন্যান্য আসামীরা গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় এলাকা পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে।
সোমবার সরেজমিন শ্রীধরপাশা এলাকা ঘুরে জানাযায়, গ্রামের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে জাবেদ আলম কোরেশী ও গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে আব্দুল মালেক গ্রুপ ও জাবেদ আলম কোরেশীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার ঘটে। ঐ সময় গুলিবিদ্ধসহ উভয় পক্ষের ২০জন আহত হয়। এর পর থেকে তাদের মধ্যে ক্ষোভের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পায়। গত ৭সেপ্টেম্বর শ্রীধরপাশা দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম জুবাইর আহমদ মাদ্রাসায় একটি মিটিংয়ের আয়োজন করেন। পরে উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে ১৬সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার জমি নিলাম সংক্রান্ত সভা মাদ্রাসা হল রুমে অনুষ্টিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঐ দিন অর্থাৎ ১৬সেপ্টেম্বর এলাকার লোকজনের উপস্থিতিতে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে শান্তিপূর্ন ভাবে জমি নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। পরে আব্দুল মালেক পক্ষের ফয়ছল মিয়া ও জাবেদ আলম কোরেশীর মধ্যে মাদ্রাসার সাইন বোর্ডে প্রতিষ্টাতা উমরা মিয়া কোরেশী লিখাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি ও বাক বিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে জাবেদ আলম কোরেশী প্রতিপক্ষ ফয়ছল মিয়াকে ছড় তাপ্পর মারলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে গ্রামের আব্দুল মালেক পক্ষের লোকজন ও জাবেদ আলম কোরেশীর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় জাবেদ আলম কোরেশীসহ তার লোকজন বৈধ ও অবৈধ বন্দুক দিয়ে গুলি করে আব্দুল মালেক পক্ষের ৪১জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। এদিকে মাদ্রাসার মুহতামিম জুবাইর আহমদ ও শিক্ষা সচিব মাওলানা মুনাজির আহমদ জানান, ১৯৬৪ সালে শ্রীধরপাশা গ্রামবাসীর উদ্যোগে ও হাজি তাহির আলীর অর্থায়নে শ্রীধরপাশা কওমী মাদ্রাসার ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালে উমরা মিয়া কোরেশীর পরিবারের লোকজন তাদের বাড়িতে আরেকটি হাফিজি মাদ্রাসা প্রতিষ্টা করেন। একই এলাকায় ২টি মাদ্রাসা হওয়াতে এলাকাবাসী কোরেশী পরিবারের লোকজনদের সাথে আলোচনা ক্রমে ১৯৯৩সালে ২টি মাদ্রাসাকে একই স্থানে নেয়ার জন্য হাফিজি মাদ্রাসাটি কোরেশী বাড়ি থেকে প্রত্যাহার করে কওমী মাদ্রাসায় সংযুক্ত করা হয়। এর পর থেকে মাদ্রাসাটির নাম করন করা হয় শ্রীধরপাশা দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা। জাবেদ আলম কোরেশী পরিবার মাদ্রাসায় কিছু জমি দান করেন। গ্রামবাসীকে না জানিয়ে মাদ্রাসার সাইনবোর্ডে জাবেদ আলম কোরেশীর দাদা উমরা মিয়া কোরেশীর নামে নাম করন এবং শ্রীধরপাশা জামে মসজিদে একই ভাবে নাম করন করায় গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এক সময় জাবেদের অর্থ বিত্ত্ব কিছুই ছিলনা। হঠাৎ অর্থ বিত্ত্বের মালিক হয়ে গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একের পর এক ঘটনাসহ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। তার বৈধ ও অবৈধ বন্দুক দিয়ে নিরীহ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ গুলি করে আহত করে যাচ্ছে। তার প্রভাবের কারনে কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। যে কারনে গ্রামের পাঞ্চায়েতী কবর স্থানের জমি ও সরকারি পুকুর সহ বিভিন্ন জনের নামে থাকা সম্পত্তিও ভোগ দখল করে রয়েছে। তাছাড়া জাবেদ আলমের পরিবার তাদের উপাধী হিসেবে কখনও কখনও নামের আগে ও পরে কোরেশী, বক্্র ও দেওয়ান ব্যবহার করায় এলাকাবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের মামলা হয়েছে। ঘটনার পর পর উভয় পক্ষের ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৪জন আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন এবং অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬সেপ্টেম্বর শ্রীধরপাশা দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার সাইন বোর্ডে নাম করন করাকে কেন্দ্র করে শ্রীধরপাশা গ্রামবাসীর পক্ষে আব্দুল মালিকের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ এবং একই গ্রামের জাবেদ আলম কোরেশীর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here