খবর৭১,উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলের কালিয়া উপজেলাধীন বনগ্রাম এলাকায় চাঞ্চল্যকর আজমল খুনের রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে খুনের ছক আঁকছে মশিয়ার বাহিনী। এমনটাই অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার জনগণ। দিনে দিনে খুনি মশিয়ার বাহিনীর দৌরাত্ম এতটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, স্থানীয় জনগণ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। ফলে প্রকাশ্যে তারা কোন প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ১২ নং চাঁচুড়ি ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের ভাই মশিয়ার দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করে আসছে। অবৈধ অস্ত্র ঠেকিয়ে স্থানীয় জনগণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলছে মশিয়ার ও তার বাহিনীর সক্রিয় সদস্যরা। সম্প্রতি কালডাঙ্গা গ্রামের মান্নান ফকিরের ছেলে আজমল ফকিরকে মিকান, তরিকুল, লাভলু, আসলামসহ কয়েকজন সন্ত্রাসীর সাহায্যে খুন করে এই মশিয়ার। অথচ এ খুনের দায়ভার চাপিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ মোল্যা বংশের ওপর। স্থানীয় কিছু অসাধু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ছত্রছায়ায় থাকায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা এলাকায় এ ধরনের অপকর্ম অনেক দিন ধরে করে আসছে। যার ধারাবাহিকতায় প্রতিবন্ধী যুবক আজমল তাদের নৃশংসতার বলি হয়। স্থানীয় প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে এমন সন্দেহে সম্প্রতি ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) আজমল খুনের মামলার তদন্তভার নিয়েছে। এতে করে প্রকৃত খুনি মশিয়ার ও তার বাহিনীর মুখোশ উন্মোচন হবে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। গোপন একটি সূত্র জানায়, আজমল খুনের মামলাটি সিআইডি’তে যাওয়ার কারণে মশিয়ার আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণে নতুন করে নিজেদের লোক খুন করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছে। মশিয়ারের মানসিক ভারসাম্যহীন আপন ভাই ওহিদুর রহমান, নিহত আজমলের চাচা রবিউল ফকির, বনগ্রামের ইমান আলী অথবা একই গ্রামের আকবর হুজুর নামের যে কোনো এক ব্যক্তিকে আবারো খুনের পরিকল্পনা করেছে এই খুনি মশিয়ার। এতে করে নতুনভাবে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। নিজের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে খুনি মশিয়ার যে কাউকে খুন করে ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন এলাকার অনেকে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে সোহরাব ভূঁইয়া নামক এক ব্যক্তিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে খুন করে এই মশিয়ার। যে কিনা মশিয়ারের দলের হয়ে কাজ করতো। ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিজ দলীয় সমর্থক বাবু মোল্যাকে পরিকল্পিতভাবে খুলনায় হত্যা করে। ২০০২ সালে হাড়িয়ারঘোপ গ্রামে বিকাশ খুনের ঘটনায়ও মশিয়ারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আনুমানিক ২০০৩ সালে কদমতলা গ্রামের একটি মেয়েকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে মশিয়ার নামক এই নরপশু। পরে অবশ্য ক্ষমতার দাপট ও কালো টাকার প্রভাবে মামলার চার্জশিট থেকে রেহাই পেয়ে যায়। ২০০৪ সালে বনগ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন ওয়াদুদ মোল্যা খুনের ঘটনায় জেল খাটে এবং বর্তমানে মামলাটি সিআইডি তদন্তে রয়েছে। ২০০৬ সালে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে এনায়েত ফকির নামে নিজ দলীয় এক দিনমজুরকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে মশিয়ার। উল্লেখ্য যে, নিহত এনায়েত ফকির বর্তমান চাঞ্চল্যকর আজমল হত্যাকান্ডে নিহত আজমলের আপন চাচাতো ভাই। এনায়েত ফকির হত্যা মামলায়ও খুনি মশিয়ার প্রতিপক্ষকে ফাসিয়ে মামলা দায়ের করে। আনুমানিক ২০১৪ সালে কালিবাড়ি এলাকার পল্লী মঙ্গল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিতব্য এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের মাঠে জনসম্মুখে আরাজি বাসগ্রামের কলেজ ছাত্র রাজুকে শর্টগান দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। রাজু হত্যা মামলা এখনও চলমান রয়েছে এবং মশিয়ার ইতোমধ্যে এ মামলায় জেলও খেটেছে। ২০১৬ সালে আটলিয়ার ফুরকান সিকদারকে কুপিয়ে দুই পা কেটে ফেলে মশিয়ার। এ মামলায়ও সে জেল খেটেছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট প্রতিপক্ষকে ফাসাতে কালডাঙ্গা গ্রামের নিরীহ প্রতিবন্ধী যুবক আজমলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মিকান, তরিকুল, লাভলু, আসলামসহ কয়েকজনের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে খুন করে, যা এলাকাবাসী বুঝতে পেরে গেছে। কারণ সকলেই জানে একজন প্রতিবন্ধী যুবকের সাথে কারও শত্রুতা থাকতে পারে না। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজের চেষ্টা চলছে এমন খবরে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) আজমল খুনের মামলার তদন্তভার নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। এছাড়াও ধর্ষণ, লুটপাট, মাদকের ব্যবসা, অন্যের জমি জোর-দখলসহ খুনি মশিয়ার ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকায় রহস্যজনক কারণে সে থেকে যাচ্ছে প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রাণে বাঁচার তাগিদে অনেকেই দিচ্ছে মোটা অঙ্কের চাঁদা। সম্প্রতি আজমল খুনের মামলা সিআইডি’তে চলে যাওয়ায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মশিয়ার নতুন খুনের পরিকল্পনা করছে এমন খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। যে কোনো মুহুর্তে যে কারো প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন এলাকার অনেকেই। খুনি মশিয়ারের দৌরাত্ম থেকে এলাকাবাসীকে বাঁচানোর আকুল আবেদন জানিয়েছেন অনেকে।
খবর৭১/জি: