৬৫১টি প্রতিমা নিয়ে সবচেয়ে বড় দূর্গা পূজাটি হচ্ছে বাগেরহাটের শিকদার বাড়ীতে

0
2267

হেদায়েত হোসাইন লিটন, বাগেরহাট:
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে বাগেরহাটের মন্ডপে মন্ডপে শেষ মুহুর্তে রঙ্গ তুলির কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভাষ্করা (কারিগররা)। আর কয়েকদিন পর শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা। দেবীদূর্গা এবছর নৌকায় চড়ে আসবেন আর যাবেন ঘোড়ায় চড়ে। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর দূর্গাপূজা চলবে। এ বছর বাগেরহাটে ৯টি উপজেলার ৬০৫টি পূজা মন্ডপে এবার অনুষ্ঠিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। এবছর জেলার বেশ কয়েকটি মন্দিরে শতাধিক প্রতিমার মন্ডপ তৈরী হচ্ছে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদরের কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কাড়াপাড়া গ্রামের রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সার্বজনীন পূজা মন্দির, চুলকাঠি বাজারের বণিকপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, পোলঘাট সার্বজনীন পূজা মন্দির এবং ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের বেতাগা মমতলা সার্বজনীন পূজা মন্ডগুলোতে বেশি সংখ্যক প্রতিমা তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়ি পূজা মন্ডপ অন্যতম। ৬৫১টি প্রতিমা নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় পূজা মন্ডপটি হচ্ছে বাগেরহাটের এই শিকদার বাড়ীতে।
গত কয়েক বছর ধরে বাগেরহাট তথা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দূর্গাপূজাটি অনুষ্ঠিত হয় ব্যক্তি উদ্যোগে। বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়ী। বাগেরহাটে দূর্গা উৎসব মানেই শিকদার বাড়ী দূর্গাপূজা। গত সাত বছর ধরে লিটন সিকদার নামে এক ব্যবসায়ী মহাধূমধামে দূর্গাপূজার আয়োজন করে আসছেন। দিনদিন সেখানে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত বছর ছিল ৬০১টি প্রতিমা। এবছর এই মন্ডপে ৬৫১টি প্রতিমা তৈরী করা হয়েছে। এটি প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পূজামন্ডপ বলে দাবী করেছেন পূজার আয়োজক ডা. দুলাল শিকদার ও তার ব্যবসায়ী ছেলে লিটন সিকদার। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নিজের ব্যক্তিগত অর্থ ব্যয় করে প্রতিবছর জামজমকপূর্ণ দূর্গাপূজার আয়োজন করে আসছেন।
ভাষ্কর মিলন বাছাড় বলেন, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতের চারযুগের দেবদেবীর নানা কাহিনী অবলম্বনে প্রতিমা তৈরী করা হয়েছে। প্রায় পাঁচ মাস ধরে ১৫ জন কারিগর তাদের নিপূণ হাতে প্রতিমা তৈরীর কাজ করে চলেছেন। শেষ সময়ে রং তুলির কাজ পুরোদমে চলছে। এখন আমাদের দম ফেলার সময় নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, শিকদারবাড়ীতে এমন দূর্গাপূজা আয়োজনের জন্য আমরা দারুণ খুশি। শিদারবাড়ীর পূজার জন্য আজ আমাদের হাকিমপুর গ্রাম দেশবিদেশে সবার কাছে পরিচিত হয়েছে। আমরা সব ধর্মের মানুষ এই দূর্গোৎসবে মিলিত হই। দূর্গোৎসব যাতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় তারজন্য আমরা সবাই সহযোগিতা করে থাকি।
আয়োজক লিটন সিকদার বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমি দূর্গাপূজার আয়োজন করে আসছি। প্রথম বছরে ২০১টি প্রতিমা দিয়ে শুরু হয়। স্থানীয় লোকজনের উৎসাহে দিনদিন প্রতিমার সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর হাকিমপুর গ্রামে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ দেশের বাইরের দর্শনার্থীরা দূর্গাপূজা দেখতে আসে। সকল ধর্মের মানুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয় দূর্গোৎসব। এবছরও তার ব্যতিক্রম হবে না। বাগেরহাটের প্রত্যন্ত হাকিমপুর গ্রামের এই পূজাটি প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বলে দাবী করেন তিনি।
বাগেরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লিটন সরকার বলেন, বাগেরহাট জেলার নয়টি উপজেলায় এবছর প্রায় ছয় শতাধিক মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছরের মত এবছরও জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে। দূর্গাপূজা মানেই এখন বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের শিকদারবাড়ীর দূর্গাপূজা। শিদারবাড়ীর পূজাটি আকর্ষণীয় হওয়ায় এখানে দর্শণার্থীদের বিপুল সমাগম ঘটে। এছাড়াও ফকিরহাটের বেতাগার মমতলা ও পোলঘাট দূর্গামন্ডপে বেশি প্রতিমার পূজা হবে। উৎসবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
বাগেরহাট হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাড. মিলন কুমার ব্যানার্জি জানান, দুর্গোৎসবে উপলক্ষ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি ভাল ভাবে চলছে। বিগত বছরের তুলনায় এবছর মহা-আড়ম্বর পূর্ণ হবে আমাদের এ অনুষ্ঠান। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তাই এ উৎসবে বাগেরহাটের সকল ধর্মের মানুষ সমানভাবে আনন্দ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, বাগেরহাট জেলায় এবছর ৬০৫টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গাাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন সারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে বাগেরহাটে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে দূর্গোৎসব শেষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের।খবর ৭১/ ই;

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here