সবজির দাম কমেছে, চাল-তেল-মুরগির বাজারে অস্থিরতা

0
5

দীর্ঘদিন চড়া থাকা দুই নিত্যপণ্য আলু ও পেঁয়াজের দাম অনেকটাই নাগালের মধ্যে এসেছে। এছাড়া সরবরাহ বাড়ায় বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। এতে খানিকটা স্বস্তি পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। তবে চাল ও ভোজ্যতেল নিয়ে ভোক্তাদের অস্বস্তি এখনো কাটেনি। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।

এরমধ্যে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসা ও ভারতের পেঁয়াজের আমদানি বাড়ায় দাম নেমেছে ৫০-৭০ টাকা কেজির মধ্যে। যা কিনতে আগে ১০০-১২০ টাকা গুনতে হতো। অন্যদিকে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা দরে। আলুর দাম কয়েক সপ্তাহ আগের তুলনায় কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

অন্যদিকে ফুলকপি, শিম, শালগম, মুলার মতো শীতকালীন সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। বাজারে ফুলকপি বিক্রি হতে দেখা গেছে ২০ থেকে ৩০ টাকা প্রতি পিস। শিম, শালগম, মুলার কেজি ৩০-৫০ টাকার মধ্যে। বরবটি, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কচুর লতি, উস্তাসহ অন্য সবজিগুলোর দামও আগের তুলনায় কেজিপ্রতি ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। মালিবাগ বাজারের বিক্রেতা ইউনুস হোসেন বলেন, শীতের সবজির ভরপুর সরবরাহের কারণে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কমেছে।

তবে বাজারে দুই সপ্তাহ আগে বাড়া চালের দাম এখনো কমেনি। এক সপ্তাহ আগে বাড়া ব্রয়লার মুরগির দামও কমেনি। পাশাপাশি দাম বাড়লেও তিন সপ্তাহে এখনো সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। বাজারে মোটা চালের দাম কেজিতে দুই টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬৪ টাকায় উঠেছে। স্বর্ণা ও পায়জাম জাতের আমনের চাল বাজারে উঠলেও এসব চালের দাম বেড়েছে। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়তি। এর প্রভাবেই খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে।

বাজার ঘুরে মিনিকেট চাল ৭২-৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রতিকেজি নাজিরশাইল জাতের চালের দাম উঠেছে ৮০ টাকায়।

বেশ কয়েক সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকার পর এক সপ্তাহ আগে হুট করে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে যায়, এখনো তা দাম কমেনি। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা পর্যন্ত, যা ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ছিল। এর প্রভাবে বাজারের সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে। এ জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০-৩৫০ টাকা, যা আগের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকা বেশি।

মুরগির দাম বাড়লেও ডিমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।

বছরের শেষ সময়ে মুরগির দাম কেজি প্রতি ৩০-৪০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বাজারে এমন অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে জানান বিক্রেতারা। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে।

বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০-২৪০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬৫০ টাকায়।

মুরগির বাজারের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ভোক্তারা বলছেন, হঠাৎ করেই বছরের শেষ সময়ে এসে মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এতে বাসায় খাওয়ার পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠান করতে বেগ পেতে হচ্ছে।

বাজার করতে আসা এক ক্রেতা বলেন, প্রতি বছরই এ সময়টায় এসে নানা অজুহাতে মুরগির বাজার অস্থির করে তোলেন ব্যবসায়ীরা। এবারও সে একই পথে যাচ্ছে বাজার। এখনই পদক্ষেপ না নিলে বাজার ফের নাগালের বাইরে চলে যাবে। রাজধানীর শান্তিনগর বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, বিয়ে, জন্মদিন ও পিকনিকের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে গেছে। এছাড়া, সামনে থার্টি ফাস্ট নাইট আসছে। এসব অনুষ্ঠানে প্রচুর মুরগির ব্যবহার হয়। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে।

মুরগির বাজারে এ অস্থিরতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খোন্দকার মো. মহসিন বলেন, বাজারে মুরগির সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। বিয়ে, জন্মদিন ও থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে চাহিদা বাড়ায় সাময়িক দাম বেড়েছে। উৎসবের ভাবটা কেটে গেলে দাম কমে যাবে।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রান্তিক খামারিদের স্বার্থ রক্ষা না হওয়ায় মুরগির উৎপাদনে সংকট চলছে। ভোক্তা পর্যায়ে ২০০ টাকা ব্রয়লার মুরগির যৌক্তিক মূল্য। এর থেকে দাম কমিয়ে রাখতে হলে ফিড ও বাচ্চার দাম কমানোর বিকল্প নেই।

করপোরেট কোম্পানির লাগাম টেনে ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম স্থির করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, একদিকে মুরগির দাম বেড়ে গেছে, অন্যদিকে মুরগির বাচ্চার দামও বেড়েছে। এটিও দেখতে হবে। করপোরেট কোম্পানিগুলো সরকারের নীতিমালা মানছে না। বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে মূলত সিন্ডিকেটের কারণে, যা খামারিদের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলেও জানান সুমন হাওলাদার।

এদিকে, মুরগির দাম বাড়লেও বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে ডিম এবং গরু ও খাসির মাংসের দাম। ডজন প্রতি ৫ টাকা কমে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৩৫-২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here