প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে ‘নির্বাচনী রোডম্যাপ ‘ নিয়ে আশাহত জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনী রোডম্যাপে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি উপদেষ্টা। এক্ষেত্রে আমরা হতাশ হয়েছি। সেই সাথে উপদেষ্টার প্রেস সচিব যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা সাংঘর্ষিক । প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন , ‘২৫ সালের শেষে অথবা ২৬ এর শুরুতে নির্বাচন হবে । আর প্রেস সচিব বলেছেন, ‘ ২৬ এর জুনে নির্বাচন হতে পারে’ । এক্সাক্টলি ( পূর্ণভাবে) আমরা বুঝতে পারছি না , কোনটি সঠিক। নির্বাচন বিষয়ে রোডম্যাপ কোন যুক্তিকতায় হয়নি।আজ গুলশান বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গতকালের স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গত ১৮ ডিসেম্বর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য যথাক্রমে১. ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন২. মির্জা আব্বাস৩. বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়৪. ড. আব্দুল মঈন খান৫. মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৬. জনাব আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী৭. জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদ৮. বেগম সেলিমা রহমান৯. মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বীর বিক্রম১০. অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন।সভায় যে সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়েছে, সভায়, চলতি বছরের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহের বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে মহাসচিব সভাকে অবহিত করেন। সভায়, গত ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপদেষ্টার ভাষণের যে ব্যাখ্যা দেন তা নিয়েও আলোচনা হয়। সভা মনে করে, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ভাষণে নির্বাচন সংক্রান্ত বক্তব্য অস্পষ্ট। তাঁর বক্তব্যে নির্বাচনের একটি সাম্ভাব্য সময়ের কথা বলা হলেও নির্বাচনের রোড ম্যাপ সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখা হয় নি। ড. মুহাম্মদ ইউনুস নির্বাচনের সাম্ভাব্য সময় সীমা ২৫ সালের শেষ অথবা ২৬ সালের প্রথম অংশে অনুষ্ঠানের কথা বলেন, যা একেবারেই অস্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট কোন সময় উল্লেখ নেই। অথচ তাঁর প্রেস সচিব বলেন যে, ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা পরস্পর বিরোধী। সভা মনে করে, এই ধরনের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য আরো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। সভা মনে করে, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়ে গেছে সেহেতু, নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিলম্বের প্রয়োজন নেই। নির্বাচন কেন্দ্রীক সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে দ্রæত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। জনগণ এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার নিকট হতে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করে। সভা মনে করে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা উচিত।সভায়, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংক্রান্ত মাননীয় হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আমাদের বক্তব্যÑ উক্ত সংশোধনীতে মোট ৫৫টি দফায় সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে প্রস্তাবনায় এবং তফশিলে ব্যাপক পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও বিয়োজন করার মধ্য দিয়ে সংবিধানকে একদলীয় শাসন এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের প্রধানতম হাতিয়ারে পরিণত করা হয়। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্থ করে গণতন্ত্রকে বেহাত করে দেয়া হয়। আদালত উন্মুক্ত আদালতে রায়ের ঘোষাণার সময়ে কিছু কিছু বিষয়ে মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ সহ উক্ত সংশোদনীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন এবং কিছু অংশ সংরক্ষণ করেছেন এবং অধিকাংশ আগামী সংসদের বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু রীট আবেদনকারীগণ, সংযুক্ত হওয়া রাজনৈতিক দল সমূহ এবং অন্যান্য অংশীজন এবং দেশের আপামর জনসাধারণ আদালতের কাছে আরো বেশী কিছু সিদ্ধান্ত আশা করেছিলো। রীট আবেদনকারীগণ পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার প্রার্থনা করেছিলেন। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তিগণ রীটের পক্ষে Intervenor হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন। আমরা এই রায়কে Appreciate করি। আদালত স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, নির্বাচিত পরবর্তী সংসদই সংবিধান সংশোধনীর একমাত্র উপযুক্ত ফোরাম। আদালত মোটাদাগে ৬টি বিষয় অবৈধ ঘোষণা করেছেনঃ ক. তত্ত¡বধায়ক সরকার বিষয়ক অনুচ্ছেদ ৫৮(ক) এবং ২য় (ক) পরিচ্ছেদ বিলুপ্তিকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো (গণতন্ত্র) ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে মর্মে মন্তব্য করেছেন। খ. ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধানকে স্বীকৃতি দিয়ে গণভোটের বিধান ফিরিয়ে এনেছেন। গ. অনুচ্ছেদ ৭ (ক), ৭(খ) বিলুপ্ত ঘোষণা করে সংবিধানকে Supreme Law হিসাবে সাংবিধানিক ঘোষণাকে পুনঃউল্লেখ করেছেন। সংবিধান একটি পরিবর্তনযোগ্য দলিল বা আইন যা একমাত্র নির্বাচিত সংসদের এখতিয়ার। ফ্যাসীবাদী আওয়ামী সরকার সংবিধানের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এবং কিছু তফশীল অপরিবর্তনীয় ঘোষণা করেছিলো যা এই রায়ের মাধ্যমে বাতিল হয়েছে। ঘ. সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ উচ্চ আদালতে একতিয়ার (অনুচ্ছেদ ১০২ সংক্রান্ত) অধস্থন আদালতে হস্তান্তর করার বিধান বাতিল করা হয়েছে। ঙ. সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৯৬ বহাল রাখা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১৮ (ক) পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংক্রান্ত, অনুচ্ছেদ ২৩ (ক) উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতি সত্তা ও নৃগোষ্টির সংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়দি। এই অনুচ্ছেদ সমূহ বহাল রাখা হয়েছে। চ. পঞ্চদশ সংশোধনীর অন্যান্য সকল বিষয় সমূহ পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের বিবেচনার জন্য আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং সংবিধানের সকল প্রকার সংশোধনী একমাত্র নির্বাচিত সংসদেরই এখতিয়ার বা কর্ম তার বিচার বিভাগীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।৪। সভায়, অবিলম্বে ফ্যাসীবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল গুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত মাননীয় সদস্যদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।৫। সভা শেষে সভাপতি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা মুলতবী করার হয় বলে জানান মির্জা ফখরুল।