পোশাক শ্রমিকদের জন্য সুখবর, ৯% হারে বাড়বে বেতন

0
9

সুখবর এসেছে দেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য। এখন থেকে প্রতি বছর পোশাক শ্রমিকরা বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট পাবেন ৯ শতাংশ হারে। অর্থাৎ প্রতি বছর ৯ শতাংশ হারে তাদের বেতন বাড়বে। শ্রমিক ও মালিকপক্ষের মধ্যে দর কষাকষির পর এ হার চূড়ান্ত করেছে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের গঠন করে দেওয়া কমিটি। এর আগে পোশাক শ্রমিকদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি হতো ৫ শতাংশ হারে।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) পোশাক শিল্প খাতের নিম্নতম মজুরি পুনর্মূল্যায়ন ও বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ে সক্ষমতা ও করণীয়বিষয়ক কমিটির পঞ্চম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

ওই সভার সিদ্ধান্ত ও সুপারিশের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, সোমবার কমিটির পঞ্চম সভায় ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো নিয়ে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন। শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা আলোচনায় সর্বশেষ ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির বিষয়ে অভিমত দেন। মালিকপক্ষ প্রতিনিধিরা ছিলেন ৮ শতাংশের বেশি ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি না করার পক্ষে।

বিষয়টি নিয়ে সভায় দুপক্ষসহ কমিটির সদস্যরা বিস্তারিত আলোচনা করেন। এসব আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির সভাপতি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সবুর হোসেন এখনকার ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে আরও ৪ শতাংশ যুক্ত করে মোট ৯ শতাংশ বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির সুপারিশ সিদ্ধান্ত আকারে জানান।

সভার সিদ্ধান্ত, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির হার ৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৯ শতাংশে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত চলতি ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর হবে। সে হিসাবে আগামী বছরের প্রথম মাস জানুয়ারি মাসেই শ্রমিকরা ইনক্রিমেন্টের নতুন এই হার অনুযায়ী বেতন পাবেন। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের বেতনের সঙ্গেই ইনক্রিমেন্ট বাড়তি হারে যোগ হবে।

সভার সিদ্ধান্তে আরও বলা হয়, নিম্নতম মজুরি বোর্ড নির্ধারিত বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট, অর্থাৎ ৫ শতাংশ বিদ্যমান অবস্থায় অব্যাহত থাকবে। বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সর্বশেষ সংশোধিত) সম্পর্কিত অন্যান্য সুবিধাও প্রাসঙ্গিক হবে। সরকার পুনর্মূল্যায়ন না করা পর্যন্ত কিংবা নিম্নতম মজুরি বোর্ড পরবর্তী নিম্নতম মজুরি হার ঘোষণা না করা পর্যন্ত এ মজুরি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

ওই কমিটির সদস্য নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পোশাক শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্মূল্যায়নে সরকার কমিটি করে দেয়। সেই কমিটির আজকের (সোমবার) বৈঠকে পোশাক শ্রমিকদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ৫ শতাংশ ছিল। শ্রমিকদের যে ১৮ দফ দাবি ছিল, ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানোর দাবিও তার মধ্যে ছিল।’

জানতে চাইলে বিজেএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট যে ৯ শতাংশ হারে বাড়ানো হলো, এটি আমাদের জন্য কষ্টকর। কারণ আমাদের মালিকদের আয় সেভাবে বাড়েনি। বরং খরচ বেড়েছে। পোশাক রফতানি কমেছে, পোশাকের দাম কমেছে। নতুন করে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন আমাদের জন্য কষ্টকর হবে। তবে সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা তো বাস্তবায়ন করতেই হবে। সরকারকেও এই সিদ্ধান্ত মানতে মালিকদের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’

পোশাক খাতে স্থিতিশীলতায় সব পক্ষতে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘আলোচনা করে যেকোনো কিছুই সমাধান করা সম্ভব। অতীতে দেখেছি, শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে জনজীবন বিপর্যস্ত করেছেন। অনেকের প্ররোচনায় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে জনদুর্ভোগ তৈরি করেছেন। এতে পোশাক খাতসহ দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে সবকিছুই সমাধান করা সম্ভব।’

সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদার, নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. হাসিবুজ্জামান, শ্রম অধিদফতরের পরিচালক এস এম এনামুল হক, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এ এন এম সাইফুদ্দীন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কবির আহমদ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের বাবুল আখতার ও বাংলাদেশ জাতীয়বাদী শ্রমিক দলের মোহাম্মদ খোরশেদ আলম উপস্থিত ছিলেন। নতুন সিদ্ধান্তে সভায় উপস্থিত সব পক্ষ সই করেছেন।

এর আগে সবশেষ ২০২৩ সালে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়। তবে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের পোশাক খাত অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রমিক আন্দোলন চলতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার শ্রমিকদের দেওয়া ১৮ দফা প্রস্তাব বিবেচনায় নিতে একটি কমিটি করে দেয়। সেই কমিটিই নতুন করে আরও ৪ শতাংশ হারে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর উদ্যোগ নিলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here