‘তৃতীয় পারমাণবিক যুগের’ দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব, যুক্তরাজ্যের সতর্কবার্তা

0
13

বর্তমান বিশ্ব ‘তৃতীয় পারমাণবিক যুগের’ দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল টনি রাডাকিন। তাঁর মতে, নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার সঙ্গে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী বিশ্ব ব্যবস্থা যে কোনো সময়ের চেয়ে জটিল ক্রান্তিকাল পার করছে।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটে (আরইউএসআই) এক ভাষণে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঝুঁকি নিয়ে হুঁশিয়ার করেন তিনি। বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাডাকিন বলেন, ‘যুক্তরাজ্য বা ন্যাটো মিত্রদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পারমাণবিক হামলার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও বর্তমান হুমকিকে গুরুত্ব দিতে হবে।’

সতর্কবার্তার পক্ষে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ব্রিটিশ অধিনায়ক বলেন, ‘স্নায়ুযুদ্ধের সময় দুই পরাশক্তি পারমাণবিক শক্তি প্রতিরোধের মাধ্যমে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। এরপর তিন দশক পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। কিন্তু এই যুগে এসে সবকিছু জটিল হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তৃতীয় পারমাণবিক যুগের সূচনালগ্নে আছি। এটি বিশ্বজুড়ে একযোগে উদ্ভূত সংকট। কিন্তু এই ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক প্রযুক্তির বিস্তার ঠেকাতে পারে— এমন কোনো নিরাপত্তা কাঠামো আমাদের নেই।’

বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় ‘ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক প্রযুক্তির’ বিস্তার ঠেকানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর সামনে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন রাডাকিন। এক্ষেত্রে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি, চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার বৃদ্ধির উদ্যোগ, পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণে ইরানের অসহযোগিতা এবং উত্তর কোরিয়ার ‘অস্থিতিশীল আচরণ’— এই বিষয়গুলোর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। এর পাশাপাশি সাইবার আক্রমণ, নাশকতা এবং বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা পশ্চিমা দেশগুলোর স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে বলে তাঁর দাবি।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রুশ বাহিনীর পাশে উত্তর কোরিয়ার সেনার উপস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছেন রাডাকিন। বিষয়টিকে ২০২৪ সালের ‘সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। আশঙ্কাপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে।’

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে রাডাকিন বলেন, যুক্তরাজ্যের জোরদার পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখন সময়ে দাবি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর এটিই সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।

তিনি জানান, পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত সাবমেরিন সমুদ্রে মোতায়েন করে রেখেছে যুক্তরাজ্য। এর ফলে আক্রমণের সময় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানো সম্ভব হয়।

বর্তমানে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি কৌশলগত পর্যালোচনা করছে যুক্তরাজ্য সরকার। যা আগামী বছরের প্রথমদিকে প্রকাশিত হবে। পরবর্তীতে এই পর্যালোচনা থেকে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশটির সশস্ত্র বাহিনী কীভাবে পরিচালিত ও সজ্জিত হবে তার রূপরেখা তৈরি করা হবে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিশ্বজুড়ে চলমান সংকট এবং ভবিষ্যতের পারমাণবিক হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এই সতর্কবার্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here