ভারতীয় মুদ্রা রুপির আবারও দরপতন হয়েছে। চার পয়সা কমে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির মূল্য দাঁড়ায় ৮৪ দশমিক ৭৪২৫, যা ইতিহাসে সর্বনিম্ন। এর আগের দিন সোমবার (২ ডিসেম্বর) রুপির দর ছিল ৮৪ দশমিক ৭০৫০ রুপি। এদিন, ভারতের জিডিপি তথ্য প্রকাশের পর রুপির শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ পতন ঘটে, যা গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ডলারের দর ৮৪ দশমিক ৭০ রুপিতে স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ঘোষণায় ডলার চাঙা হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, ব্রিকস দেশগুলো যদি নিজস্ব মুদ্রা চালু করতে চায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এই দেশগুলোর পণ্যে ১০০ ভাগ শুল্ক আরোপ করবে। এতে ইউএস ডলার ইনডেক্সের মানও বেড়েছে।
এছাড়া ভারতীয় অর্থনীতির নিজস্ব কিছু কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ভারতের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকে কিছু দুর্বলতা আছে। এছাড়া ভারতের শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগ চলে যাওয়ার কারণেও রুপির দরে প্রভাব পড়ছে।
একজন শীর্ষস্থানীয় মুদ্রা ব্যবসায়ীর মতে, ‘রুপি ৮৪ দশমিক ৫০ থেকে বর্তমান স্তরে পৌঁছানো তুলনামূলকভাবে বড় কোনও বাধা ছাড়াই হয়েছে। এটি ইঙ্গিত করে যে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (আরবিআই) হস্তক্ষেপ কম ছিল অথবা ডলারের চাহিদা অত্যধিক। উভয় ক্ষেত্রেই এটি রুপির জন্য উদ্বেগজনক একটি সংকেত।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, রুপির দরপতন আরও বেশি হতো, কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরবিআইর হস্তক্ষেপের কারণে তা কিছুটা রোখা গেছে। আরবিআই রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ডলার বিক্রি করে বাজার থেকে রুপি তুলে নিয়েছে। ফলে দরপতন কিছুটা থেমেছে। তবে রুপির ধারাবাহিক দরপতনকে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগজনক বলছেন। গত কয়েক মাস ধরে রুপির দর রুখতে বাজারে হস্তক্ষেপ করছে আরবিআই।
অর্থবছরের দ্বিতীয় জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে। ওই সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, যেটা প্রায় দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগের বছর একই সময়ে দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ। মূলত উৎপাদন খাতের ধীরগতির কারণেই প্রবৃদ্ধি কমেছে। সেই সঙ্গে ভারতের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমছে।
ভারতের দুর্বল জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং আরবিআইয়ের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পতন রুপির জন্য দুর্বল অবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে জানিয়ে এএনজেডের অর্থনীতিবিদ ধীরাজ নিম জানান, ‘দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব রুপির অবনমন অবশ্যম্ভাবী করে তুলছে। বাজারে এখন আরবিআইয়ের কার্যকর পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দরপতনের পর আরবিআইয়ের হস্তক্ষেপ এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর ডলার বিক্রির ফলে রুপির দর কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়েছে। ভারতীয় মুদ্রা বাজার এখন আরবিআইয়ের সুদের হার সিদ্ধান্ত এবং এই সপ্তাহের শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বাজারের প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করছে।
এক মাসের ফরোয়ার্ড চুক্তি অনুযায়ী, বুধবার রুপি আগের দিনের ৮৪ দশমিক ৬৮৫০ এর কাছাকাছি থেকে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, ভারতের শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। গত কয়েক মাসে প্রবণতা অনেকটা শক্তিশালী হয়েছে। চীন অর্থনীতি চাঙা করতে আবারও বড় ধরনের প্রণোদনা দিয়েছে। এ বাস্তবতায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতের বাজারে শেয়ার বিক্রি করে চীনের বাজারে বিনিয়োগ করার নীতি গ্রহণ করেছেন। ফলে ভারতীয় মুদ্রার দর কিছুদিন পরই ডলারের বিপরীতে পতনের নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে।