আগামীতে সরকার ও বিরোধী দলকে ‘জনগণের কাছে দায়বদ্ধ’ থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, একটা নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছে… তারা সংস্কার করতে চায়। আমাদের সেই সব আকাঙ্খার কিছু অংশ এই সরকার দ্বারা পূরণ হতে পারে। কিন্তু যা হবে না সেটা পূরণ করার দায়িত্বটা আপনাদেরকেই নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জনগণের কাছে সেই প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে, থাকা না খালি… এমন একটা ব্যবস্থা অন্তত করতে হবে যাতে করে সকলেরই দায়বদ্ধতা থাকবে। যারা সরকারে থাকবে তাদের দায়বদ্ধতা থাকবে, যারা বিরোধী দলে থাকবে তাদেরও দায়বদ্ধতা থাকবে, যারা সাংবাদিক থাকবে তাদেরও দায়বদ্ধতা থাকবে, যারা লেখক থাকবে তাদেরও দায়বদ্ধতা থাকবে। সবারই দায়বদ্ধতা থাকবে এবং দায়বদ্ধতা থাকবে জনগণের কাছে।
নজরুল ইসলাম বলেন, কারণ তারাই (জনগণ) রাজনৈতিকভাবে রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার মালিক। আমি বিশ্বাস করি, আগামী দিনে সেই রকম একটি পরিস্থিতি আমরা অর্জন করতে পারব। সমালোচনা কিছুটা বাদ দেন। যারা আজকে দায়িত্বে আছেন আমি তাদের সাফল্য কামনা করি এবং বিশ্বাস করি যে, তাদের ওপর অর্পিত যতটুকু দায়িত্ব সেটা পালন করে তারা মর্যাদার সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, সংস্কার এটা তো একটা চলমান ইস্যু। আমরা সংস্কার চাই বলে তো বলছি, দেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে, তার প্রায় তিনভাগেরও একভাগের বেশি অপরিবর্তনীয়… কখনও পরিবর্তন করা যাবে না। অর্থাৎ পরবর্তী পার্লামেন্টে যারা থ্রি-ফোর্থও যদি একমত হয়, এরা সবাই যদি একমত হয় তাহলেও বদলাতে পারবে না। এটা হয়? আমি আজকে নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করে বললাম যে, এটা হলো সঠিক… ভবিষ্যতে আর কেউ পরিবর্তন করতে পারবেন না। এটা ভুল। আমার চেয়ে বুদ্ধিমান, আমার চেয়ে দেশপ্রেমিক মানুষ ভবিষ্যতে কেউ এসে পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী যদি কোনো পরিবর্তন করার উচিত মনে করে তাহলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেটা করতে পারে তারা। আজকে যে সংস্কারের কথা হচ্ছে আজকে যে বৈষম্য বিরোধের কথা হচ্ছে, আজকে যে বঞ্চনা নিরসনের কথা হচ্ছে তার জন্য যে পরিবর্তনে কথাগুলো করতে হবে সেই পরিবর্তনে এমন অনেক কিছু আসবে সেগুলোকে অপরিবর্তনীয় করে দেওয়া হয়েছে। এটা যে শেষ হয়ে গেলো তা না… হয়ত এখন থেকে ১০ বছর পরে আমরাই আবার সবাই চাইব সেটারও আবার কিছু পরিবর্তন আরও কিছু সংস্কার হতে হবে।
তিনি বলেন, এই সংস্কার তো সংবিধানে সংস্কার দরকার, ব্যবস্থায় সংস্কার দরকার, ভাবনায় সংস্কার দরকার, কর্তব্য সম্পাদনের যে প্রক্রিয়া সেগুলোতে সংস্কার দরকার এখানে একজন বলেছেন যে, নির্বাচনী আইনে সংস্কার দরকার, নির্বাচন ব্যবস্থায় হয়ত সংস্কার দরকার যেটা আমাদের ভাবতে হবে শুধু এই… সব সংস্কারই কি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করে দেবে।
তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জনগণের সরকারকেও অনেক কাজ করতে হবে। যে কাজ তারা করবেন সেই প্রতিশ্রুতি তাদেরকে আগেই বলতে হবে। যাতে করে তার আলোকে জনগণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে তাকেই সেই পরিবর্তনে দায়িত্ব দেবে। বাংলাদেশে নাই এটা কিন্তু বিভিন্ন দেশে আছে। আপনি জার্মানিতে যান, কোরিয়াতে যান, জাপানে যান সেখানে নির্বাচনের আগে যারা ক্ষমতা প্রত্যাশী তারা সেখানকার বিভিন্ন পেশাভিত্তিক যে সংগঠন তাদের কাছে চিঠি লেখে… তারা বলে যে, আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যেতে চাই, নির্বাচনে অংশ নিতে চাই, আমরা নির্বাচিত হলে এই এই করব… আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করুন… সমর্থন করুন। বিভিন্ন সংগঠন তারা নিজেরা বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় তারা কোন দলকে সমর্থন করবে। তারা যাদেরকে সমর্থন করে তারা জিতে…. বাংলাদেশেও আমাদের সংগঠনগুলোকে সেরকমভাবে গড়ে তুলতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপিসহ সমমনাদলগুলো ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের কথাও তুলে ধরেন নজরুল।
সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির উদ্যোগে ‘রক্তভেজা গণঅভ্যুত্থান-গণআকাঙ্খার বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আকবর খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির মোস্তাফা জামাল হায়দার, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের সাকিব আনোয়ার, এবি পার্টির আবু সোলায়মান চৌধুরী, সাংবাদিক সোহরাব হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।