স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের দোসরদের নানামুখী যড়যন্ত্র থেকে দেশের জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত জনসভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।এসময় তিনি আরও বলেন, চক্রান্ত হলে দাঁত ভাঙা জবাব দিতে হবে। আগামীতে বিএনপি দেশে উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতি চালু করতে চায় বলেও জানান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র রাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই জনগণের সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সেজন্য প্রয়োজন জনগণের সমর্থন। দেশের জনগণের সমর্থনে আমরা সে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলে সেদিনও আপনাদের সমস্যার কথা আমার মনে থাকবে।’
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর মুক্তির দাবিতে বুধবার বিকেলে এই জনসভা অসুষ্ঠিত হয়।এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভাপতিত্ব করেন গোপালপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান ও প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।প্রায় ১৭ বছর পর গোপালপুরের এই জনসভায় উপস্থিত মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’র পুত্র তারেক রহমানের বক্তব্য। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বিকাল পৌনে ৫টার দিকে হাজির হলে হাজার হাজার জনতা তাকে অভিবাদন জানান।প্রায় ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে বেশীরভাগজুড়ে তারেক রহমান টাঙ্গাইল জেলার বিখ্যাত নানা পণ্যের সম্ভাবনা নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক মুক্তি হলে দেশ এগিয়ে যাবে।’
জনসভায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘গোপালপুরের আমার ভাইবোন, সন্তানতুল্য আমাদের পরের প্রজন্ম আর আমার শ্রদ্ধেয় মুরুব্বিরা আসসালামু আলাইকুম। প্রায় সতেরো বছর পর আপনারদের সামনে কথা বলছি। কেমন আছেন আপনারা সবাই। আলহামদুলিল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দূরে থেকে আপনাদের সাথে কথা বললেও সব সময়ই আমার মন পড়ে আছে আপনাদের মাঝেই। দেশে থাকতে আপনাদের ভূয়াপুর, গোপালপুরের ওপর দিয়ে আমাকে প্রায়ই যেতে হতো দেশের উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার সময়। সুতরাং আপনারা আমার মনের একটা বিরাট জায়গা দখল করে আছেন।’বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি জানি আজ এখানে শুধু গোপালপুর আর ভূয়াপুরের জনগণই নন। পাশের মধুপুর, ধনবাড়ি, ঘাটাইল, টাঙাইল সদর ছাড়াও জামালপুর জেলারও অনেকেই উপস্থিত আছেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বক্তব্য তো আপনারা প্রায়ই শোনেন। আমি রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে চাইও না। আমার পিতা আপনাদের সবার প্রাণের মানুষ; তিনি আমাকে ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন- কিভাবে দেশের খেটে খাওয়া কৃষক মজুর আর সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যেতে হয়, আর আমার মা আপনাদের সবার প্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাকে শিখিয়েছেন মানুষের ভালোবাসা অর্জনের গুরুত্ব, শিখিয়েছেন দেশের মা, বোনের সমস্যা সমাধানে কিভাবে কাজ করতে হয়।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমি জানি টাঙাইলের শাড়ী আর চমচমের কথা। যদিও টাঙাইলের শাড়ীর সাথে আপনাদের পাশের উপজেলা দেলদুয়ারের নাম সবাই বলে, কিন্তু আমি জানি- এই গোপালপুরেও টাঙাইলের বিখ্যাত শাড়ি তৈরি হয়। এখানকার মা বোনেরা সূতা রঙ করেন, সেগুলো শুকান আর মাকুতে ভরেন এবং ভাইয়ারা সেটা তাতে লাগিয়ে অসাধারণ সুন্দর শাড়ি তৈরি করেন।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা তাঁতের কারখানা আরো বাড়ান, দেলদুয়ারের সাথে প্রতিযোগিতা করতে। প্রতিযোগিতা করলে সবারই মান উন্নত হবে। আমি জানি সুতার দাম, রঙের দামের সাথে আপনারা কুলিয়ে উঠতে পারেন না। আবার ঠিকমত বাজারজাতও করতে পারেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি কখনো আপনাদের দোয়ার আপনাদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেন, তাহলে আপনাদের সমস্যা আজ যেমন মনে করলাম ভবিষ্যতেও ভুলবো না।’
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘পৃথিবীর মানুষ জানে টাঙাইল পৃথিবীর কোথায় অবস্থিত। তবে আমাদের গুণগত মান বাড়াতে হবে, ডিজাইনে আনতে হবে বৈচিত্র্য আর সূতি, সিল্ক এবং সূতি সিল্কের সংমিশ্রণেও নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করতে হবে। শাড়ি আমাদের মা বোনের হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। একদিন আসবে আমরা বিদেশ থেকে শাড়ি আনবো না বরং পৃথিবীর যে সব দেশে মহিলারা শাড়ি পরেন, আর যেখানে বাংলাদেশিরা আছেন সেখানেও অদুর ভবিষতে শাড়ির একাটাই নাম থাকবে টাঙাইল শাড়ি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘এই এলাকার আরেকটি উল্লেখযোগ্য পণ্য হলো- চমচম। পৃথিবীর মানুষ জানে চমচম মানেই টাঙাইল আর পোড়াবাড়ি। এখানকার দুধ আর পানি দিয়ে যে চমচম তৈরি হয়, সেটা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যাবে না। কিন্তু এখানেও সমস্যা, নদীতে পানি নেই, দুধের দাম চড়া আমার গরীব ভাই বোনদের জন্য দাম সহনীয় নয়। আমরা যদি সুযোগ পাই দেশে গবাদিপশুর সংখ্যা যেমন বাড়াবো, তেমনি বন্ধ খাল আর নদী আবারও খনন করবো। আর এই চমচম বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে টিনজাত হয়ে পৃথিবীর সব কোণায় পৌঁছে যাবে।’
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমি জানি, বাংলাদেশের যেকয়টি জায়গায় এখনো পাট অন্যতম প্রধান ফসল তারমধ্যে গোপালপুর, ভূয়াপুর উল্লেখযোগ্য। একসময় এখানকার ঝিনাই, ধলেশ্বরী আর বৈরান নদী দিয়ে বড় বড় নৌযান পাট নিয়ে যেত নারায়ণগঞ্জে। আজ বাংলাদেশে পাটের দুর্দশা। এখানেও অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। পাট দিয়ে কেন শুধু বস্তা তৈরি হবে। সারাবিশ্ব আজ পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত, আমাদেরও পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পলিথিন আমাদের নদী খাল পুকুর ফসলের জমি সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। পলিথিন মাটি পানি কিছুতেই মিশে যায় না।’
তিনি বলেন, ‘পাটের নতুন নতুন ব্যবহার বাড়াতে হবে, আবিষ্কার করতে হবে। ব্যাগ, বোর্ড, জুতা, স্যান্ডেল, আসাবাব পত্র তৈরির কাজে পাটের ব্যবহার উদ্ভাবন করতে হবে। আর পাটকাঠি দিয়ে শুধু পার্টিকেল বোর্ড নয়, এটারও নতুন নতুন ব্যবহার আবিষ্কার করতে হবে পরিবেশ বাঁচাতে। পাটের বংশ ইতিহাস বা জেনেটিক ভালো করে রপ্ত করে উন্নত মানের উচ্চ ফলনশীল বীজ আবিষ্কার করতে হবে। কথা দিচ্ছি মহান আল্লাহ আমাদের সুযোগ দিলে আমি এর একটি কথাও ভুলে যাবো না।’
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমাদের অনেকেই হয়তো জানেন না, গোপালপুর আর টাঙাইলের অনেক জায়গায় খুবই উন্নত মানের টুপি তৈরি হয়। রপ্তানী ও হয় পৃথিবীর বহু দেশে। আপনার মক্কা শরিফের ফুটপাতে আর দোকান থেকে যে টুপি কিনে আনেন হজ্ব ওমরার সময় সেগুলোর বেশিরভাগই এই টাঙাইলে তৈরি হয়। এর উন্নতি আর বাজারজাত করতে সাহায্য করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘এখানে গরু মোটাতাজা করার অনেক ছোট বড় খামার আছে, আপনারা কোরবানির সময় গবাদিপশুর বিরাট একটা অংশ এখান থেকে পূরণ করেন। আমরা আপনাদের বিষয় মনে রাখবো, বিশেষ করে পশুখাদ্যের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে আপনাদের অনেক সমস্যা আছে।’
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম টাঙ্গাইলে বিএনপি’র এমন জনসভা। এতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গোপালপুরের সূতি ভিএম হাইস্কুল মাঠের সমাবেশে যোগ দেন বিএনপি’র নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। স্লোগানে স্লোগানে তারা মুক্তির দাবি জানান তাদের প্রিয় নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর।