দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারীদের শুধু বহিষ্কার নয়, আইনী ব্যবস্থা নেয়াও হবে: তারেক রহমান

0
56

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনারা দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারীদের চিহ্নিত করুন, প্রতিরোধ করুন। দল তাদের শুধু বহিষ্কারের অঙ্গীকারই নয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিচ্ছে।

তিনি দলের তৃণমূলের উপর তার অগাধ আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে এক এগারোর দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, দলের সকল সংকট কালে তৃণমূলই ছিল বিএনপির শক্তি, এরা শত প্রলোভন আর নির্যাতন উপেক্ষা করে ইস্পাত কঠিন ঐক্য দিয়ে দলকে ধরে রেখেছেন।

তারেক রহমান আরও বলেন, তৃণমূল সাথে থাকলে দল যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে যেমন সক্ষম হবে, তেমনি তার পক্ষেও পরিচালনা করতে অনেক সহজ হবে দল।

দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সাথে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের অংশ হিসাবে সোমবার খুলনা বিভাগের সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের মালিকানা এদেশের মানুষের আর স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন তার ন্যায্য গণতান্ত্রিক অধিকার। দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ১৯৯৬ সালে বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার নির্বিঘ্ন করতে দলীয় সরকারের পরিবর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত করেছিল। কিন্তু ক্ষমতা কুক্ষিগত করে জনগণকে তাদের ভোটাধিকার বঞ্চিত করার লক্ষ্যে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার সেটা সংবিধান থেকে মুছে দিয়ে তিন তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণকে ভোটাধিকার বঞ্চিত রেখেছে। আমরা জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে আবারও সংযুক্ত করতে চাই।

তিনি বলেন, বিএনপি দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করে। মানুষের নিরাপত্তা, বাক স্বাধীনতা, শান্তিতে ব্যবসা বাণিজ্য করার অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। এছাড়া তরুণ ও যুবকের কর্ম সংস্থান সৃষ্টি, নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, গোষ্ঠী, সমতল, পাহাড়ি নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান রাষ্ট্রীয় অধিকার নিশ্চিত, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বিচার আইন ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, সকলের জন্য স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত, কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি, সর্বোপরি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করাই বিএনপির রাজনীতির অগ্রাধিকার।

তারেক রহমান আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, যে বাড়িতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাস করেছেন, যে বাড়ির প্রতিটি ইঞ্চিতে তার নিজের (তারেক রহমান) ও তার ভাইয়ের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি জড়িয়ে আছে, যে বাড়ী তার মায়ের ( বেগম খালেদা জিয়া) সংসারের সূচনা আর বৈধব্যের বেদনার স্বাক্ষী সেই বাড়ী থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কতটা অসম্মানজনক ও অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে সেটা দেশবাসী দেখেছেন।

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, বিনা চিকিৎসায় তার (তারেক রহমান) একমাত্র ভাইকে নিদারুণ অবহেলায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, ঠিক তেমনি ভাবে দলের তৃণমূলের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীকে মামলা, হামলায় জর্জরিত হয়ে পরিবার-পরিজন বিসর্জন দিয়ে, ব্যবসা, চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে, হয় কারাগারে নয়তো আত্মগোপনে আর অগণিত নেতাকর্মী অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন দেশকে ভালোবেসে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে।

তিনি তৃণমূলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তারা যেমন অতীতের মতো প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করেন না, তেমনি তিনি এবং দলের প্রধান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও জানেন যে, দেশের মানুষও গত ১৫ বছর বাংলাদেশ নামের এক বৃহত্তর কারাগারে বন্দী জীবন যাপন করেছেন। সুতরাং আজ হিংসা নয় বরং দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমে অতীতের সকল অন্যায়ের জবাব দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন, সংগ্রাম, ত্যাগ, বঞ্চণা সহ্য করে বিএনপি আজ জনগণের যে আস্থা আর ভালোবাসা অর্জন করেছে, দলের কিছু বিপথগামীর হঠকারিতায় মানুষের সেই আস্থা আর প্রত্যাশার জায়গা ক্ষতিগ্রস্থ হবে সেটা কোন ভাবেই সহ্য করা হবে না। তিনি যেই হোন না কেন।

তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ আর আগামীর আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে রাষ্ট্র কাঠামো সংষ্কারের ৩১ দফা কর্মসূচির মূল বিষয়গুলো তুলে ধরে এই বার্তা দেশের প্রান্তিক সকল মানুষের কাছে পৌঁছাতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন।

তারেক রহমান দৃশ্যমান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অসংখ্য অদৃশ্য প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বৈরাচারের পতন শুধুমাত্র প্রাথমিক বিজয়, সামনে রয়েছে প্রকৃত পরীক্ষা। ফলে আত্মতুষ্টি আর সকল শিথিলতা কাটিয়ে আগামীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশের আপামর জনগণের দলের প্রতি সমর্থন আর ভালোবাসার প্রতিদান দিতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here