সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে এস এম আমীর হামজা নামে এক ব্যক্তি মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে মোহাম্মদপুর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
গত ১৯শে জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে মারা যান রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকার মুদি দোকানি আবু সায়েদ। এই ঘটনায় ওই এলাকার এক ব্যক্তি বাদী হয়ে গতকাল আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন। আদালত মামলার বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর অভিযোগটি আমলে নিয়ে বেলা পৌনে তিনটার দিকে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করতে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেন আদালত। হত্যাকাণ্ডের এই মামলায় বাদী নিজে সহ ৫ জনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। সাক্ষীরা হলেন- শেখ ইফতেখার আহমেদ, সামাদ, এস এম রকিবুল, এস এম রকিবুল ইসলাম মেশকাত ও এস এম হাসানুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে যা উল্লেখ করা হয়েছে: ১৯শে জুলাই বিকাল ৪টায় মোহাম্মদপুর থানার বসিলা ৪০ ফিট চৌরাস্তায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করছিল। আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়।
এ সময় রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় চৌরাস্তার মুদি দোকানদার আবু সায়েদ (৪৫)। গুলি তার মাথার এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু সায়েদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এরপর স্থানীয়রা তার গ্রামের বাড়িতে লাশ পাঠিয়ে দেয়। তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়োয়া বামনহাট ইউনিয়নের নতুন বস্তি প্রধানহাটে। সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, ছাত্র-জনতার ন্যায্য যৌক্তিক দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল। কোনো ধরনের উস্কানি ছাড়া পুলিশ সদস্যরা আসামিদের নির্দেশে গুলি করে আবু সায়েদকে হত্যা করে। আবু সায়েদের বাড়ি পঞ্চগড়। তার বাসার সদস্যরা গরিব হওয়ায় আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না বিধায় সচেতন নাগরিক হিসেবে বাদী বিচারের দাবি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন চলাকালে শক্ত হাতে দমনের নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় আসামি ওবায়দুল কাদেরও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে আন্দোলন দমনের নির্দেশনা দেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল পুলিশকে মিছিলে গুলি করার নির্দেশ দেন। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার আন্দোলন দমাতে তাদের অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা প্রদান করেন। এ ছাড়া অন্যান্য অজ্ঞাতনামা পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর নির্দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার নিরীহ ছাত্র-জনতাকে এসব আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে হত্যা করে। এজাহারে আরও বলা হয়, হত্যা মামলার তদন্ত হলে অজ্ঞাতনামা আরও তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী, এমপি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সদস্যদের নাম উঠে আসবে।