কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে নিহতের ঘটনা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে জাতিসংঘকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও চিঠি দেবে দলটি।
শনিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকে মনে করছেন আমরা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি না। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনে সারাদেশে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার তদন্তের জন্য আগেও বলেছি। আমরা এখন নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসংঘের কাছে তদন্ত চেয়ে চিঠি দেব। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও চিঠি দেব। এছাড়া আন্দোলন করার কারণে আটক ৫০ প্রবাসীকে মুক্তির জন্য ইউএইকে চিঠি দেব।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাই মাসের শুরু থেকে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে সরকার বল প্রয়োগ করে তা দমনের চেষ্টা চালায়। রংপুরে বুক পেতে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবু সাঈদকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। এরপর সারাদেশে এই আন্দোলনে গণমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী হাজারের কাছাকাছি মানুষ নিহত হন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকারের পদত্যাগের এক দফায় রূপ নেয়। গত সোমবার (৫ আগস্ট) ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে টানা প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরও সারাদেশে কয়েকশ মানুষ নিহত হন। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছাত্র রয়েছে। এছাড়া পুলিশ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা রয়েছেন। নিহত হয়েছে অনেক সাধারণ মানুষও, যাদের মধ্যে বেশ কিছু শিশুও মারা গেছে।
‘সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ করবেন না’
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নিয়ে যেসব সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে তাকে চক্রান্ত বলে মনে করে বিএনপি। দেশে এই ধরনের যেসব সমস্যা হচ্ছে তা সম্প্রদায়গত নয় দাবি করে এগুলোকে রাজনৈতিক সমস্যা বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। দেশে এবং বিদেশে কিছু কিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়গুলো তুলে ধরছে। আমরা মনে করি এটা একেবারেই সঠিক নয়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তবে কিছু কিছু সমস্যা নিঃসন্দেহে তৈরি হয়েছে। এগুলো সম্প্রদায়গতভাবে নয়, রাজনৈতিক সমস্যা। এটার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের বিশেষ করে আমাদের জড়িয়ে একটা অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা বলতে চাই, এই ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে বিএনপি জড়িত নয়। এমনকি কোনো সুস্থ ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক দল এটার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। সম্পূর্ণভাবে একটা চক্রান্ত চলছে।’
ফখরুল বলেন, এর মধ্য দিয়ে নতুন করে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তাকে নস্যাৎ করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এসময় মির্জা ফখরুল গণমাধ্যমকর্মীদের বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন না করার অনুরোধ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন ফারুক, বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।