ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে পালিয়ে গেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের অধিক সময়ের কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের অবসান হলো।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করে সেনানিবাসে নিজ কার্যালয়ের সামনে সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান জানিয়েছেন, দেশ পরিচালনার জন্য একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে কয়েক লাখ মানুষ গণভবনে ঢুকে পড়েন। উল্লসিত জনতাকে গণভবনের চেয়ার, পুকুরের মাছ এবং অন্যান্য আসবাবপত্র নিয়ে উল্লাস করতে দেখা গেছে।
বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে, সেনাপ্রধান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। দেশ পরিচালনার জন্য একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।”
একই সঙ্গে প্রতিটি মৃত্যু ও অন্যান্য নৃশংসতার তদন্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই পদক্ষেপে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা যুদ্ধ ও সহিংসতার মাধ্যমে আর কিছু অর্জন করতে পারব না। আমি আপনাদের সকলকে সব সংঘাত ও ধ্বংস বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি জনগণকে সহযোগিতা ও শান্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, তাঁরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং প্রত্যাশা করেন এই আলোচনা ফলপ্রসূ হবে।
এই বৈঠকে, বিএনপি, বাংলাদেশে জামায়াত-ই-ইসলামী, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা থাকলেও সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না বলে জানান তিনি।
পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনে “অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে,” জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অর্থনীতির দিক থেকে, আমাদের অবকাঠামোর ক্ষতি হচ্ছে, এসব প্রতিকারে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করুন।”
তিনি আরো বলেন, ছাত্রদের এবং রাজনীতিবিদদের এখন প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সহায়তা করা।
এছাড়া সেনাপ্রধান অতি শীঘ্রই সকল ছাত্র শিক্ষক প্রতিনিধির সাথে সরাসরি আলোচনায় বসবেন বলেও এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর কোন দেশে গেছেন তা এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত (স্থানীয় সময় ছয়টা) নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে কলকাতা থেকে প্রকাশিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার অনলাইনের এক খবরে বলা হয়েছে, পদত্যাগের পর শেখ হাসিনাকে “কপ্টারে করে” ভারতের “আগরতলা বিমানবন্দরে” নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সোমবার ঢাকার রাজপথে বেলা এগারোটা থেকে জনস্রোত শুরু হয়। ক্ষোভের সেই মিছিল আনন্দ মিছিলে রূপ নেয়। উল্লসিত জনতাকে লালসবুজ পতাকা নেড়ে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।
জুলাই মাসের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কার চেয়ে আন্দোলন শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পরবর্তীতে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে, “মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা পাবে না কি কোটা রাজাকারের বাচ্চারা পাবে?” প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
শিক্ষার্থীরা “তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার,স্বৈরাচার” এমন স্লোগান দিলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনকারীদের মোকাবেলা করতে ছাত্রলীগ একাই যথেষ্ট।
তার এই বক্তব্যের পর ছাত্রলীগ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার পর পরিস্থিতি অবনতি হতে শুরু করে।
আস্তে আস্তে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে। রোববার পর্যন্ত সহিংসতায় নিহত হন তিন শতাধিক মানুষ।
ছাত্র ও গণআন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর জাতীয় সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন হাজারো বিক্ষোভকারী।
সোমবার দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে।
বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাদুঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধানের ধানমন্ডি কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ও ভাঙচুর করা হয়।
রাজধানীর ধানমন্ডির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করছেন আন্দোলনকারীরা। ঘটনাস্থল থেকে বেনার প্রতিনিধি জানান, ফটক ভেঙে হাজারো আন্দোলনকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় ঢুকে পড়েন। বাড়ির ভেতর থেকে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।
এই পরিস্থিতিতে এক বার্তায় দেশবাসীকে শান্ত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হওয়া লাখ লাখ মানুষকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজয় উল্লাস করতে দেখেছেন বেনার প্রতিনিধিরা।