বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করে তোলার জন্য সরকার চক্রান্ত করছে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিতে বাংলাদেশের কোনো লাভ হয়নি। তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানির হিস্যা পায়নি, দেশে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না।
সোমবার (১ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরস্থ জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে এখন ফ্যাসিবাদ সরকার ব্যবস্থা চলছে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চেপে বসেছে।
তিনি আরও বলেন, শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ দেশের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান নষ্ট করেছে, দেশের মানুষ বিচার পায় না। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত কষ্টে আছে, আইনের শাসন নেই।
ফখরুল বলেন, এই সরকারের অধীনে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আমাদের আইনজীবীরা এখন এসেছে আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য, এছাড়াও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করবে তারা।
তিনি বলেন, তারা (সরকার) আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের কাছে কখনো সত্য কথা বলে নাই। সব সময় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মানুষকে তারা বোকা বানানোর চেষ্টা করেছে। আজকে যেসব সমঝোতা-চুক্তি সই করে এসেছে এর মধ্যে পরিস্কার করে বলা আছে যে, এই সব সমঝোতা হয়েছে। এই সমঝোতাগুলোর অর্থই হচ্ছে যে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে নির্ভরশীল করে ফেলবে ভারতের কাছে… এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সমঝোতার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক যেটা আপনার… রেল করিডোর যেটা দিচ্ছে…এই রেল করিডোর বাংলাদেশের কোনো কাজে লাগবে না। বাংলাদেশের মাটিতে তারা রেল লাইন ব্যবহার করবে…সেখানে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ ব্যাহত হবে না…অন্যান্য বিষয়গুলো.. আকাশ-স্থল-নৌপথ সবখানে তারা (সরকার) আজকে তাদেরকে (ভারত) পার্টানারশীপে দিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, পার্টনারশীপে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, কানেক্টিভিটিতে আমাদের আপত্তি নেই। বাংলাদেশ কি পেলো… সেটাই হচ্ছে প্রধান। আমরা তো এখানে কিচ্ছু পাইনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্সা সেই পানি আমরা পাইনি, তিস্তা নদীর পানি আমরা পাইনি। আমাদের সীমান্তে হত্যা বন্ধ হচ্ছে না, আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি আছে। তার জন্য সেখানে স্বচ্ছ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেজন্য আমরা সমঝোতা-চুক্তি নিয়ে যেসব কথা বলছি, সেটা সত্য কথা বলছি। আমরা কোনো ষড়যন্ত্রের কথা বলছি না। আমরা বলছি, এই অবৈধ সরকারই আজকে চক্রান্ত করছে যে, বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করে ফেলা।
হোলি আর্টিজেন দিবসের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, হলি আর্টিজানের বিষয়টা আমরা কনডেম করেছি, যেকোনো ধরণের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে।
কিন্তু এরা যেটা করেছে, এই সরকার যেটা করেছে তারা জঙ্গিবাদের নাম করে তাদের বিরোধী পক্ষকে হয়রানি করেছে, তাদেরকে গ্রেফতার করেছে এবং তাদেরকে কারাগারের নিক্ষেপ করেছে।
বিকেলে দুযোর্গপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নবনিযুক্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে আইনজীবীদের নিয়ে মির্জা ফখরুল শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন এবং প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।
এ সময়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহসভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম, অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিওন প্রমুখ ছিলেন।
গত ৯ জুন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক এটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী মারা গেলে সেই পদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। দায়িত্বভার নেওয়ার পর তিনি দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে এই অনুষ্ঠান।
জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরামের নতুন সভাপতি অ্যাডভেকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, আমরা সুপ্রিম কোর্ট ও ঢাকা কোর্টের আইনজীবীরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে এসেছি, আমরা তার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।
তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য আমরা আজকে শপথ নিয়েছি। ইনশাআল্লাহ অল্প কিছু দিনের মধ্যে আমরা চেষ্টা করব বিচার বিভাগের মাধ্যমেই আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করার জন্য এবং সেজন্য সকল আইনজীবীরা প্রস্তুত হয়ে আছে। ইনশাআল্লাহ জাতীয়তাবাদী আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এবং আমরা আল্লাহর রহমতে সাকসেসফুল হবো।