আমেরিকা যেতেই হবে এমন কোনো কথা আছে: সেনাপ্রধান আজিজ
‘সামরিক বা বিজিবিতে ঠিকাদারি কাজ পেতে আমার কোনো ভাইকে সহায়তা করিনি। সেনাপ্রধান ও বিজিবির ডিজি হিসেবে মোট সাত বছর ছিলাম। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এটা বলতে চাই- আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই।’ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর মঙ্গলবার সমকালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘‘২০২১ সালের আল জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ নামক একটি নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। সেখানে কিছু গালগল্প বিস্তারিতভাবে বলা হয়। এবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে তার মধ্যে দু’টি অভিযোগ আনা হয়। আল জাজিরার গল্পের সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। দু’টি বিষয় এক সূত্রে গাঁথা।’’
আরেক প্রশ্নের জবাবে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক লোক নই। তাই এই নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ত আছে কি-না বলতে পারব না। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যদিও ব্যক্তিগত। তবে বর্তমান সরকারের সময়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। তাই নিষেধাজ্ঞা সরকারকেও হেয় করার অপচেষ্টা হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি তদন্ত করে আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ আনতে প্রমাণ আনতে পারে যে, আমি বিজিবি অথবা সেনাবাহিনীতে আমার কোনো ভাইকে কন্ট্রাক্ট দিয়েছিলাম- যে ধরনের মিলিটারি কন্ট্রাক্টের কথা (মার্কিন নিষেধাজ্ঞায়) বলা হচ্ছে, তাহলে এর পরিণতি ভোগ করতে আমি প্রস্তুত। আমার কোনো ভাইকে বা কোনো আত্মীয়য়কে বিজিবি বা সেনাবাহিনীতে কোনো কন্ট্রাক্ট দেইনি।’
আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার ভাইকে বাংলােশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আমার যে ভাইয়ের কথা বলা হচ্ছে, সে ২০০২ সাল থেকে দেশের বাইরে। বৈধ কাগজপত্র নিয়ে গেছে। আমার ভাইকে আমার অফিশিয়াল ক্যাপাসিটি ব্যবহার করে, প্রচলিত নিয়মকানুন এভয়েড করে সহযোগিতা করেছি- এই অভিযোগ আমি মেনে নিতে পারছি না। আমার ভাইকে দেশ থেকে চলে যাওয়ার জন্য সহায়তা করেছি- এই অভিযোগ মেনে নিতে পারছি না। এটা আমার জন্য প্রযোজ্য নয় বলে আমি মনে করি।’
সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘ডয়চে ভেলেতে আগেও আমি যখন ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম, তখন বলেছি- আমার কোনো ভাইকে আমি কোনো কন্ট্রাক্ট দিয়েছি এর কোনো প্রমাণ কেউ আমাকে দেখাতে পারবে না। এবার বলছি- এমন অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। তথ্য-প্রমাণ ছাড়া এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, মানে আমি যেতে পারব না। ঠিক আছে, গেলাম না। আমেরিকা যেতেই হবে এমন কোনো কথা আছে? বাট, সত্যিকার অর্থে এটা এম্বারাসিং- আমেরিকা কেন করল, কী করল, আই ডু নট নো। দিস ইজ ভেরি আনফরচুনেট।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি অবাক ও মর্মাহত হয়েছেন এবং বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। যে দুটো অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য নয়, মিথ্যা।
আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আমি সেরকম মনে করছি না। এটা খুবই আনফরচুনেট। আমি নিশ্চিত, এটা লোকজন বুঝবে।’
মার্কিন দূতাবাসকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কেন? না, আমার জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, আমি সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এমন কোনো কাজ করিনি, এমন কোনো কাজ করিনি, আবারও জোর দিয়ে বলছি, যেটার জন্য আমার এ ধরনের একটা নিষেধাজ্ঞা পেতে হবে। আমি আবারও জোর দিয়ে বলছি।’