গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত করায় নিকারাগুয়ার ১০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

0
126

খবর ৭১: গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত করা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত থাকায় নিকারাগুয়ার ১০০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

শনিবার (১৯ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগা এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজারিও মুরিলোর শাসনামলে নিকারাগুয়ানদের মানবাধিকার সীমিত করার সাথে ওই ১০০ কর্মকর্তা জড়িত। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, নাগরিক স্বাধীনতার ওপর নির্বিচার আক্রমণের ঘটনায় ওর্তেগা-মুরিলো প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই কর্মকর্তারা সুশীল সমাজের সংস্থাগুলোকে দমন, নাগরিক পরিসর বন্ধ করার প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছিলেন। তারা অন্যায়ভাবে সরকারের সমালোচকদের আটক করেছেন। আটককৃতদের মধ্যে দেশটির সরকারের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত বিশপ রোলান্ডো আলভারেজও রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মতে, ওর্তেগার শাসনামলে একাধিক ক্যাথলিক রেডিও স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রেডিও স্টেশন বন্ধ করে দেওয়ার সমালোচনা করায় গত বছর দেশটিতে আলভারেজসহ একাধিক পুরোহিতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) বলছে, সরকারি কর্মকাণ্ডে বাধা, সরকারের কাজের অবমূল্যায়ন, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো এবং অবাধ্যতার দায়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আলভারেজকে ২৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই সময় তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি তার নিকারাগুয়ান নাগরিকত্বও বাতিল করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, ‘আমরা নিকারাগুয়ার সরকারের প্রতি নিঃশর্ত ও অবিলম্বে বিশপ আলভারেজ এবং অন্যায়ভাবে আটক সকল বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

নিকারাগুয়ার সরকার দেশটিতে জেসুইট-পরিচালিত বিখ্যাত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘সন্ত্রাসের কেন্দ্র’ আখ্যা দিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে; যা দেশটির ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে সরকারের সর্বশেষ হুমকিমূলক পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়। নিকারাগুয়ার সরকারের এমন পদক্ষেপের কয়েকদিন পরই মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো।

দেশটিতে ২০২১ সালের নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হওয়ার আগে ড্যানিয়েল ওর্তেগা কয়েক ডজন বিরোধীদলীয় নেতাকে কারাগারে পাঠান। দেশটির বিরোধীদলীয় অনেক নেতা ও সরকারের সমালোচক ওই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে মন্তব্য করেন।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ড্যানিয়েল ওর্তেগার প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণের আগ মুহূর্তে নিকারাগুয়ার ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয় মার্কিন অর্থবিভাগ। একই সঙ্গে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাবাহিনী, টেলিকম এবং খনি খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদও জব্দ করা হয়।

এর আগে, ২০২১ সালে নিকারাগুয়ার রাজনীতি ও বিচার ব্যবস্থার সাথে জড়িত ১০০ জনের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। এই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন নিকারাগুয়ার সংসদ জাতীয় পরিষদের কিছু সদস্য, বিচারক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা।

গত ১৯ জুলাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দায়ে মধ্য আমেরিকার চারটি দেশের ৩৯ জনের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মধ্যে নিকারাগুয়ারও ১৩ জন ছিলেন। এছাড়া বাকিরা হলেন গুয়াতেমালার ১০ জন, হন্ডুরাসের ১০ জন এবং এল সালভাদরের ছয়জন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা চিহ্নিত বিদেশি এই ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাপ্রাপ্তিতে ও দেশটিতে প্রবেশের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, ইতিমধ্যে তাদের নামে কোনও ভিসা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার ও অন্য কোনও বৈধ ভিসা বা প্রবেশের নথিপত্রও বাতিল করা হবে। সূত্র: এপি, দ্য হিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here