খবর ৭১: বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে চায় সেভাবেই বাংলাদেশে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হতে হবে বলে জানিয়েছে ভারত। দেশটির আশা, বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিকল্পনামাফিক ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এ কথা জানান। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর আগ্রহ ও তৎপরতার মধ্যে ভারত এই প্রথম তার প্রত্যাশার কথা জানাল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে অন্য দেশগুলোর মন্তব্যকে ভারত কিভাবে দেখছে। জবাবে মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, বাংলাদেশে কিভাবে নির্বাচন হবে তা বাংলাদেশই ঠিক করবে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কিছু দেশের মন্তব্যকে ইঙ্গিত করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেখুন, আমার মনে হয় অনেক ধরনের তৎপরতা চলছে। সম্ভবত এগুলো নিয়ে লোকজন কথা বলছে।
’ তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্ব এ বিষয়ে (বাংলাদেশ) মন্তব্য করতে পারে। কিন্তু ভারত হলো ভারত। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত বিশেষ সম্পর্ক আছে।’
অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘বাংলাদেশে যা ঘটে, তার সঙ্গে আমরা খুবই সম্পৃক্ত।
কারণ বাংলাদেশে যা ঘটে তার প্রভাব আমাদের ওপর পড়ে। বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে চায় সেভাবেই নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হতে হবে।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘অবশ্যই আমরা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সেখানে আমাদের একটি হাইকমিশন আছে। আমাদের প্রত্যাশা শান্তি, কোনো সংঘাত নয় এবং পরিকল্পনা অনুযায়ীই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
’
তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের দাবি বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও অন্যান্য বিষয়ে নিশ্চিতভাবেই আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে বলে নয়াদিল্লি স্বীকার করে। ২০১৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন করলেও ভারত সেই নির্বাচনকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে স্বীকার করেছে এবং ওই নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও বিজয়ী আওয়ামী লীগ সরকারকে ভারত অভিনন্দন জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন তার দুই দফা বৈশ্বিক গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সংঘাতমুক্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। গত মে মাসে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দৃশ্যত চাপ ও নানামুখী তৎপরতায় ভারতের বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গত জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। তবে এ বিষয়ে কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডারসেক্রেটারি আজরা জেয়া, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ভারত ও বাংলাদেশ সফর করেন। ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আজরা জেয়ার বৈঠকেও আঞ্চলিক ইস্যুতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এসেছে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। এ ছাড়া আজরা জেয়া দিল্লি সফরকালে ভারতের গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।