খবর ৭১: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সোয়া এক ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিকেল ৩টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের তিন ঘণ্টা পর বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রবেশ করে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের পতাকাবাহী গাড়ি। এসময় তার সঙ্গে ব্রিটিশ পলিটিক্যাল কাউন্সিলর টিমোথি ডকেট উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নতুন করে আজকে বলার কিছু নেই। আমরা একটা কথা বারবার বলছি যে, বাংলাদেশের ওপর সব গণতন্ত্রকামী দেশ ও গণতন্ত্রকামী সংগঠন- যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, মানবাধিকারে বিশ্বাস করে, বিশেষ করে আইনের শাসনে, জীবনের নিরাপত্তা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে… সবার কনসার্ন একটা জায়গায়…। এর পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হচ্ছে একটা নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন এবং সেটা বাংলাদেশের জনগণের যেভাবে প্রত্যাশা তাদের (গণতান্ত্রিক দেশগুলোর) একই প্রত্যাশা।’
‘বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এ নির্বাচনে তাদের সংসদ নির্বাচন করবে, তাদের সরকার নির্বাচন করবে… এ কনসার্ন সবার আছে। ব্রিটিশ সরকারের সব সময় ছিল। আমরা ওয়েস্ট মিনিস্টার ফলো করি। এ বিষয়গুলোই আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের প্রেক্ষাপটটা যদি ব্যাখ্যা করি, কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, কতজন আহত হয়েছেন, কতজন গ্রেফতার হয়েছেন, কত মামলা হয়েছে, কোথায় কোথায় জেলা প্রশাসক পোস্টিং করা হচ্ছে বা হয়েছে, কোথায় কোথায় পুলিশ অফিসার পোস্টিং হচ্ছে, কোথায় কোথায় টিএনও পোস্টিং হচ্ছে… এ নির্বাচনে চুরি করার যে প্রকল্প এটা গত এক সপ্তাহে তথ্য… নির্বাচনে চুরি করা প্রকল্প, ভোট চুরির প্রকল্প অব্যাহত আছে।’
‘কোথায় নির্বাচন ছয় মাস পরে। কিন্তু ভোটচুরির প্রকল্প অ্যাক্টিভভাবে চলছে। এটার কোনো পরিবর্তন কেউ দেখতে পাচ্ছে না। এ জন্য বাংলাদেশে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এ ভোট চুরির প্রকল্প ভাঙার একমাত্র পথ নির্দলীয় সরকার। এ আলোচনা এখন সব জয়গায় চলছে। আমাদের আজকের আলোচনায় এগুলো উঠে এসেছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বৈঠকের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘এই যে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে তাগাদা দেওয়ার অর্থটা কি? কিছুটা লজ্জা-শরম থাকা দরকার তাই না। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’
সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে নির্দলীয় যে সরকারের কথা আপনারা বলছেন তাতে ব্রিটিশ সমর্থন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক দেশগুলো বাংলাদেশে কেন আসছে, কেন বার্তা দিচ্ছে, কোনো প্রতিনিধিমূলক, অংশীদারত্বমূলক, অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছে? তারা কি অন্য কোনো দেশে যাচ্ছে সাউথ এশিয়াতে … তারা কোথায় যাচ্ছে না।’
‘কেন আসছে? বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয় না… এটা কি বলার অপেক্ষা রাখে? তারা যেভাবে কথাগুলো বলছে এটার অর্থই হচ্ছে বাংলাদেশে নির্বাচন হচ্ছে না, দেশের জনগণ ভোট দিতে পারছে না, জনগণ তাদের সংসদ ও সরকার নির্বাচন করতে পারছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক দেশগুলো নির্বাচন নিয়ে কথাগুলো বলছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, বাংলাদেশে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হতো তাহলে এসব প্রশ্নও উঠতো, আলোচনা হতো না আর ব্রিটিশ হাইকমিশনারও এখানে এসে এসব আলোচনা করতেন না।’
‘বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র ফিরে পেতে চায়, তার ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়, তার আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক রাজনীতি, সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেতে চায়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চায়, জীবনের নিরাপত্তা চায়… এগুলো বিএনপি দাবি নয়, এগুলো এ দেশের কোটি কোটি মানুষের দাবি।’
সরকারি দল থেকে বলা হচ্ছে যে, বিদেশিরা নির্দলীয় সরকারের কোনো ধরনের ইন্টারেস্ট ফিল করেনি। কিন্তু আপনারা বলছেন যে, তাদের কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে বাংলাদেশে এ রকম সরকারের কথা। এ ব্যাপারে আপনাদের বক্তব্য কী প্রশ্ন করা হলে আমীর খসরু বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হলে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া হবে না। এটা কে না বুঝে বাংলাদেশে।’