খবর ৭১: দিন যতই যাচ্ছে, ততই ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার ঘনত্ব এবং সম্ভাব্য প্রজননস্থলের সংখ্যা সর্বোচ্চ। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) মহাখালীর স্বাস্থ্য ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক রোগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, এবার ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীতে বসবাস করা সবাই। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮টি ওয়ার্ডের মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বলেও জানান তিনি।
ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই গত পাঁচ বছরের হিসাব টপকে বেশ বিপজ্জনক মাত্রায় অবস্থান করছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৯৮৭১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশে ষাটের দশকে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্তের পর পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালেই পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। সেবার ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, তাদের মধ্যে মৃত্যু ঘটে ১৭৯ জনের। আক্রান্ত এবং মৃতদের বেশিরভাগই ছিল রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা।
ওই বছর প্রাক-বর্ষা মৌসুম জরিপে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২১টি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ছিল ২০ এর বেশি। আর চলতি বছর প্রাক-বর্ষা মৌসুম জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, এবার তার দ্বিগুণের বেশি ৫৫টি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর উপরে।
দুই সিটির গড় ব্রুটো ইনডেক্সই ২০ এর বেশি, ডিএনসিসি এলাকায় ২৫ দশমিক ৫২ এবং ডিএসসিসি এলাকায় ২০ দশমিক ৯৮। দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯৮টিতে গত ১৮ থেকে ২৭ জুন এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
এই জরিপের ফলকে উদ্বেগজনক বলছেন কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলছেন, আমরা সকলেই কিন্তু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি।
এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই শুরু হয়েছে। এইডিস মশার উপস্থিতি বেশি থাকায় এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা উত্তর সিটির ২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড হলো- ২, ৩, ৫, ৬, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৩, ৩৫, ৩৭ ও ৩৮।
এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৮টি ওয়ার্ড হলো- ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, ২২, ২৩, ২৬, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৪১, ৪৪, ৪৬, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫৪, ৫৫ ও ৫৬।
ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির ২০ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং দক্ষিণে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, রাস্তা উঁচু হওয়া, ভবনের নিচতলায় কিংবা পার্কিংয়ে জমে থাকা পানির কারণে লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে বেশি।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন জানান, গত বছর ছিল ডেন থ্রি এবং ডেন ফোর। এ বছর ডেন টু আর ডেন থ্রি। চারটি সেরোটাইপ গত বছর ছিল না। কক্সবাজারে ডেন ওয়ানের একটা কেইস পাওয়া গিয়েছিল। ব্যাপারটা হচ্ছে যে পুরো বাংলাদেশের যদি চিত্র চিন্তা করি তাহলে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম থাকতে পারে। যেহেতু আমরা বিভিন্ন হসপিটাল থেকে স্যাম্পেল যেগুলো পাই সেটার ওপরে সেরোটাইপ করে থাকি। ওইটার ভিত্তিতেই আমরা এবারে বলতে পারছি যে ডেন টু ৬২ শতাংশ এবং ডেন থ্রি ৩৮ শতাংশ।