সৈয়দপুর সিটি ব্যাংকে গ্রাহকদের ভীড়

0
208

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :
নীলফামারীর সৈয়দপুরে সিটি ব্যাংকের এক গ্রাহকের এফডিআরের ৩৪ লাখ টাকা একাউন্ট থেকে উধাও হওয়ার খবরে রবিবার (১৮ জুন) একাউন্ট চেক করতে গ্রাহকরা ভীড় করেছে ব্যাংকে। এসে একাউন্টে গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা না খোঁজ নিতে এসে এদিনও কয়েকজন গ্রাহকের জমাকৃত টাকা একাউন্টে শুন্য থাকায় তারা ব্যাংকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পরে ঘটনা যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য বিক্ষুদ্ধ গ্রাহকদের ম্যানেজ করে তা সমন্বয় করার চেস্টা চালিয়েছেন স্থানীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ । টাকা উধাও ঘটনায় অনেক গ্রাহক তাদের আমানত তুলে নিয়েছে। বিভিন্ন সুত্র থেকে মিলেছে এমন তথ্য।

এদিকে সৈয়দপুরস্থ সিটি ব্যাংক শাখার এই অনিয়ম ও দূর্নীতি তদন্তে ঢাকা থেকে ব্যাংকের ২ জন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসেছেন। তারা দিনভর আগত গ্রাহকদের একাউন্ট চেক করা এবং তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে একাউন্ট থেকে উধাও হওয়া টাকা সমন্বয় অন্যান্য বিষয় তদন্ত করেছে। যা আগামী কার্যদিবসেও অব্যাহত থাকবে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) শরিফা নামে এক গ্রাহক টাকার প্রয়োজন হওয়ায় ওই ব্যাংকে যান এফডিআর করা ৩০ লাখ টাকা উত্তোলনের জন্য। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন এফডিআরের ৩০ লাখসহ ওই একাউন্টে থাকা আরও প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা নেই। এনিয়ে ওই গ্রাহকের টাকা উধাও হওয়ার বিষয়টি গোটা শহরে চাউর হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় গ্রাহকদের মাঝে আতঙ্ক শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে শহরের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী রবিবার (১৮ জুন) ব্যাংকে গিয়ে তার একাউন্ট চেক করলে হিসাবে গড়মিল পান। সে অনুযায়ী তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদর্শণ করলে দেখা যায় প্রায় ১৪ লাখ টাকা ঘাপলা হয়েছে। একইভাবে শহরের গোলাহাট এলাকার শেফালী রানী নামে অপর এক গ্রাহকের প্রায় ১০ লাখ টাকার হিসেব নেই।

একই এলাকার মনোরঞ্জন নামের আরেক গ্রাহকের ১৮ লাখ টাকাও উধাও। এভাবে আরও প্রায় ৩ জন গ্রাহকের একাউন্ট শুন্য পাওয়া গেছে। ফলে ওই গ্রাহকরা লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলে তা গ্রহণ করেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ । তবে শাখা ম্যানেজার সুলতান মাহবুবসহ ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তারা গ্রাহকদের বুঝিয়ে তাদের টাকা দ্রুত সমন্বয় করা হবে বলে আশ্বাস এবং সমাধানের চেষ্টা করেছেন। ফলে উধাও হওয়া টাকা পাওয়ার আশায় গ্রাহকরাও মুখ খুলছেন না।

তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়া বৃহস্পতিবারের ৩৪ লাখ টাকাসহ এ পর্যন্ত তথ্যমতে এপর্যন্ত প্রায় ৭৫ লাখ টাকার অনিয়মের ঘটনা এখন পর্যন্ত বেড়িয়ে এসেছে। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবারের ৩৪ লাখ টাকা ঘাপলার বিষয়টি স্বীকার করলেও রবিবারের (১৮ জুন) গ্রাহকদের টাকা ঘাপলার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন এনিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর ব্রিফিং করে জানানো হবে।

এদিকে ব্যাংক থেকে টাকা উধাও হওয়ার ঘটনায় অনেক গ্রাহক আতঙ্কিত হয়ে তাদের আমানত তুলে নেওয়ার সিদ্ধাম্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। একারণে ব্যাংক কর্মকর্তারা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ঘাপলার শিকার গ্রাহকদের যেমন উধাও হওয়া টাকা সমন্বয়ের আশ্বাস দিচ্ছেন, তেমনি গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে কাছে মুখ খুলতে নানাভাবে চাপে রাখছেন।

এদিকে সংবাদকর্মীরা খবর পেয়ে রবিবার বিকেলে ওই ব্যাংকে গেলে তাদের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। পরে সংবাদকর্মীরা প্রতিবাদ করলে ব্যাংক ম্যানেজার সুলতান মাহবুব খান প্রবেশ করতে দিলেও তদন্তে আসা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বা বলতে দিয়ে কোন তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকেন। এমনকি উপস্থিত গ্রাহকদের সাথে কথা বলাতেও বাধা দেয়া হয়।

সৈয়দপুরের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বলেন, তার ভাবীর একাউন্টে বিভিন্ন সময় বাসাভাড়াসহ অন্যান্য খাত থেকে আসা অর্থ জমা হয়। সেই জমাকৃত টাকার পরিমান প্রায় ১৪ লাখ। বৃহস্পতিবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ সেই একাউন্টের খোজখবর নিতে এসে জানা যায় হিসেবে গড়মিল আছে। এর ফলে অভিযোগ করায় কর্তৃপক্ষ টাকাগুলো সমন্বয়ের আশ্বাস দেন।
আরেক গ্রাহক শেফালী রানী বলেন, আমারও প্রায় ১০ লাখ টাকার হিসাব পাচ্ছিনা। ব্যাংকে আসলে ম্যানেজারসহ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তাই এব্যাপারে আর বেশি কিছু বলা যাচ্ছেনা। কারণ এতে যদি সমস্যা হয়। এ নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) শরিফা বেগম নামে এক গ্রাহক তার এফডিআরের ৩৪ লাখ টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন অনেক আগেই তা তুলে নেয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ওই শাখার এসিস্টেন্ট রিলেশনশিপ ম্যানেজার (এআরএম) কে পাকড়াও করে ম্যানেজারের রুমে অবরুদ্ধ করলে সে স্বীকার করে ওই টাকা তসরুপের কথা। এসময় সে আরও জানায়, এই দূর্নীতির সাথে আরও অনেকে জড়িত আছে কিন্তু তাদের নাম বলতে চায়না। এর জন্য সে নিজেকে দায়ী করে। পরে ১৮ জুন সমন্বয় করার আশ্বাসে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়। ব্যাংক ম্যানেজার সুলতান মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন,টাকা উধাওয়ের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আপনাদের বিস্তারিত জানানো হবে। কয়েকজন গ্রাহকের আমানতের খেয়ানত হওয়ার খবরে শহরজুড়ে তোলপাড় চলছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here