খবর ৭১: ভোটাধিকার নিশ্চিত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়তে ৭ দফা দাবি জানিয়েছে গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি।
বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান নেতারা। লিখিত বক্তব্যে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বর্তমান জনবিচ্ছিন্ন, কর্তৃত্ববাদী ও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। অবৈধ সরকার মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধগুলোকে ভূলুণ্ঠিত করে আমাদের রাষ্ট্রকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ঘাট কাঠামোর প্রতিটি ঘরে আজ গণতন্ত্রহীনতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং সুপ্রীম কোর্ট বারসহ সকল পেশাজীবী সংগঠনসমূহের নির্বাচনে প্রশাসন ও পুলিশের ছায়ায় অন্যায়, অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রের সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়েছে। এই বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। লাখ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত এ মাটিকে রক্ষা করা সন্তান হিসেবে আমাদের পবিত্র কর্তব্য। আমাদের সংবিধানের মূল ভিত্তি ‘জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই মুহূর্তে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন মাঠ পর্যায়ে আরো জোরদার ও তীব্রতর করে জনবিরোধী এই ভোটবিহীন অবৈধ সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে পতিত আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে সামগ্রিকভাবে মেরামত করতে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলসমূহ এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে একটি দেশপ্রেমিক জাতীয় সরকার গঠনের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে কার্যকরভাবে রাষ্ট্রীয় মূলনীতিসমূহ বাস্তবায়নে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমুন্নত রাখতে হবে।
৭ দফা দাবিগুলো হলো-
১। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
২। বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। গায়েবি মামলা বন্ধ করতে হবে।
৩। রাষ্ট্র-ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের সীমারেখা নির্ধারণ করতে হবে। একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান এবং নির্বাহী প্রধান হতে পারবে না। একই ব্যক্তি পর পর ২ (দুই) বারের বেশি রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
৪। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগসহ সকল প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করার নিশ্চয়তা বিধান এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
৫। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বাস্তবায়ন করতে হবে এবং গণতন্ত্র, ভোট দেয়ার অধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৬। সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে হবে। গণবিরোধী ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনসহ সকল নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করতে হবে।
৭। তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সিন্ডিকেট বাণিজ্যের মূল উৎপাটন করতে হবে। খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- গণফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসিন মন্টু, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী, মহাসচিব আব্দুল কাদের প্রমুখ।