উজিরপুরে ঠিকাদারের গাফিলতি: চরম দুর্ভোগে ৩ উপজেলার মানুষ

0
119

উজিরপুর (বরিশাল): সংবাদদাতাঃ বরিশালের উজিরপুর বামরাইল ইউনিয়নের বামরাইল বন্দর থেকে -কালিহাতা হয়ে – আগরপুর সড়কে তিন মাসের মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও দুই বছর ধরে এভাবে পড়ে রয়েছে। চুক্তিতে বিকল্প সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও তা করেননি ঠিকাদার। ফলে জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এতে গৌরনদী, উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ উপজেলার নয়টি গ্রামের অর্ধলাখ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও গাফিলতির মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। তবে উপজেলা প্রকৌশলী অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন। তিনি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারীরা।

বরিশাল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বরিশাল এলজিইডি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ/পুনর্বাসন প্রকল্পের (আইবিআরপি) অধীনে উপজেলার পূর্ব কালিহাতা বাঁশের পোল নামের স্থানে ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ মিটার দীর্ঘ একটি আরসিসি সেতু নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে। এটি বামরাইল ইউনিয়নের বামরাইল এবং বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুরের মধ্যে থাকা সড়কের মাঝে পড়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০২১ সালের জুলাই মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং মেসার্স উপকূল কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার দুই বছরেও নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলজিইডির এক কর্মকর্তা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৬৫ লাখ টাকায় কাজটি নেওয়ার পর কিছুদিন কাজ করেই কাজ বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করেন ঠিকাদার। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পান ঠিকাদার।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ৬৫ লাখ টাকার সঙ্গে আরও ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ এলজিইডির মাধ্যমে বৃদ্ধি করেও ঠিকাদার কাজটি শেষ করছেন না। তিনি পুরো টাকাটাই নিজের পকেটে ভরার পাঁয়তারা করছেন। এ ছাড়া প্রকল্পের চুক্তিতে যে যে কাজগুলো করার কথা ছিল, সেগুলোও বাস্তবায়ন না করে পকেট ভরানোর জন্য অনেক টাকা বাঁচিয়েছেন ঠিকাদার। সেতু নির্মাণের আগে পথচারী ও যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও কোনো বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। সেতু নির্মাণের কারণে রাস্তা কেটে রাখায় উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের কালিহাতা, ঘন্ডেশ্বর; গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের শাহজিরা, আধুনা, শিংগা; বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের আগরপুর ও ব্রাহ্মণদী গ্রামের প্রায় অর্ধলাখ মানুষকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর দুই পাশের উইং ওয়ালের আংশিক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। উইং ওয়ালের বের করে রাখা রডগুলোতে মরিচা ধরে পড়ে আছে। রাস্তার মাঝে নির্মাণকাজ চলায় সেতুটির সঙ্গে দুই পাশের সড়ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোনো বিকল্প সড়কও করা হয়নি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, পথচারীরা কাঠ দিয়ে পার হয়ে যাতায়াত করছেন।

বামরাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. বজলুর রহমান মৃধা বলেন, ‘ঠিকাদার নির্মাণকাজে অনিয়ম, দুর্নীতি ও গাফিলতি করে গত দুই বছর যাবৎ নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছেন। বিষয়টি আমরা উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত করলেও তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেননি।’ এর চেয়ে আমাদের আগের কাঠের ব্রিজ ভালো ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স উপকূল কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী রিপন দাস অনিয়ম ও সেতুর নির্মাণকাজে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নির্মাণসামগ্রীর ঊর্ধ্বগতি ও চলতি বিল না পাওয়ার কারণে যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। প্রথম চলতি বিল হিসেবে ৫২ লাখ টাকার বিল করে মাত্র ৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা পেয়েছি। এ কারণেও কাজ ফেলে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন ১ কোটি ৫২ লাখ টাকার কাজ ২০ পারসেন্ট লেছে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকার কাজ করাহবে।

উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুব্রত রায় বলেন, ‘ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here