ছাতকে মসজিদ-মাদ্রাসার জমি নিয়ে দ্বন্ধ এলাকায় থমথমে অবস্থা

0
167

ছাতক (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতাঃ
সুনামগঞ্জ ছাতকে মসজিদ-মাদ্রাসার জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আইনাকান্দি গ্রামের এক ব্যাক্তি।

এ নিয়ে গ্রামবাসীর সাথে তার এক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পক্ষে-বিপক্ষে মামলা ও হয়েছে। মসজিদ- মাদ্রসার পক্ষে জমির দলিল,দখল ও একটি মামলার আদেশ রয়েছে এরপরও আইনাকান্দি গ্রামের আশিকুল ইসলাম জমি দখলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় সংঘাত- সংঘর্ষের আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের আইনাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মৃত খোয়াজ আলীর পুত্র আশিকুল ইসলাম। থাকেন প্রবাসে। তিনি দেশে আসলেই মসজিদ মাদ্রাসার জমি দখল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন গ্রামের লোকজন।
গ্রামের আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আশিকুল ইসলামের পক্ষের নুরুজ্জামান বাদি হয়ে গ্রামবাসী ও আলেমদের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে মামলা দায়ের করে হয়রানি করে যাচ্ছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছেন গ্রামের লোকজন।

সরজমিনে গ্রামে গিয়ে জানাযায় আইনাকান্দি গ্রামের মসজিদ ও মাদ্রাসা সংলগ্ন জমিতে একটি মাছের খামার রয়েছে।মসজিদের উত্তর দিকের ওই দেড় একর জমিতে মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য গ্রামবাসীর উদ্যোগে মাছের খামার করা হয়। এ খামারের পুর্ব দিকে আশিকুল ইসলামের বসত বাড়ি। আর এ বাড়িতে মাটি ভরাট এবং বিভিন্ন কাজে তারা মসজিদের জমি ব্যবহার করে যাচ্ছে।

গত বন্যায় মসজিদ-মাদ্রাসা নামিয় মাছের খামারটির ক্ষতি সাধন হলে গ্রামবাসীর উদ্যোগে মাছের খামারের পাড় উঁচুকরণ,খামারের উত্তর দিকে গাইড ওয়াল নির্মাণ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্রামের লোকজন কাজ শুরু করলে এতে বাঁধ সাধেন আশিকুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন এ জমি তার। কিন্তু তার ভাই নুরুল ইসলাম আবার স্বীকার করেন জমি মসজিদ ও মাদ্রাসার।
এ নিয়ে দু’ পক্ষের মধ্যে দ্বন্ধ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।গত ৩০ মার্চ গ্রামে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে থানায় পক্ষে-বিপক্ষে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আশিকুল ইসলামের পক্ষে হেলাল উদ্দিন বাদি হয়ে ৩৯ জন গ্রামবাসী এবং আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। গ্রামবাসীর পক্ষে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি হারুনুর রশিদ বাদি হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন।

এ দিকে নুরুজ্জামান বাদি হয়ে জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা (নং২৩৮/২৩ এবং ২৭৪/২৩) দায়ের করেন। ওই মামলা দু’টি নথিজাত করে গত ২৮ মার্চ সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ মসজিদ মাদ্রাসা তথা গ্রামবাসীর পক্ষে আদেশ দিয়েছেন।

জমির দখল ও মালিকানা মসজিদ-মাদ্রাসার নামে রয়েছে। উপজেলা সহকারি কমিশনার(ভুমি) মোঃ ইসলাম উদ্দিন সরেজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করেছেন।এর পরও কখনো উত্তর দিকে আবার কখনো দক্ষিণ দিকে জমির মালিকানা দাবি করছেন আশিকুল ইসলাম। মসজিদের খামারের উন্নয়ন কাজ বার-বার বাঁধাগ্রস্ত করছেন তিনি।

গ্রামের আব্দুন নুর, সেবুল মিয়া,মঈন উদ্দিন, সুরুজ আলী,সিরাজুল ইসলাম (মোতাওয়াল্লী),আব্দুল মান্নান, মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি হারুনুর রশিদ,ইউসুফ আলীসহ লোকজন জানান, আশিকুল ইসলাম দেশে আসার পর থেকে গ্রামে মামলা-মোকদ্দমা, মারামারির সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদের প্রায় ৬০ শতক জমি দখলে নিতে চান তিনি।
তারা জানান, মসজিদ-মাদ্রাসায় আশিকুল ইসলাম পরিবারের তেমন কোন অবদান নেই। মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজে সব সময়ই বাঁধা বিঘ্ন ঘটিয়ে যাচ্ছে তারা। মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র আলেম-ওলামাদের আসামি করায় গ্রামসহ পুরো এলাকা জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় শংকিত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে গ্রামে আরো ২ টি মারামারির ঘটনা ঘটেছে।অতীতে ও তার বিরুদ্ধে পিতার বিক্রিত জমি জোর দখলের অভিযোগ রয়েছে।

আইনাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, ৩০ মার্চ মসজিদের বিভিন্ন উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় মসজিদ কমিটির ১২ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জন উপস্থিত ছিলেন। সভায় ২ জনের অনুপস্থিতি ও সময় দেয়া-নেয়া নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছে। পরে উভয় পক্ষই মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়েছেন।

গ্রামের আশিকুল ইসলাম এব্যাপারে জানান, মসজিদ মাদ্রাসার জমি তিনি কখনো নিজের বলে দাবি করেন নি। গ্রামে মারামারির ঘটনা ঘটেছে ভিন্ন বিষয় নিয়ে।

জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এস আই আতিকুল আলম খন্দকার জানান, মসজিদ মাদ্রাসার ভুমি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে আইনাকান্দি গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জমা-জমি ও মারামারির ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে কয়েকটি মামলা রয়েছে।গ্রামে শানি- শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সিংচাপইড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেল এ ব্যাপারে জানান, ঘটনাটি নিষ্পত্তির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। নিষ্পত্তি হয়নি, তবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে আশাকরি শীঘ্রই এর সমাধান হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here