সৈয়দপুরে ভিজিএফের চাল বিতরণ না করে খাদ্যগুদামে মজুদের অভিযোগ,পরে প্রশাসনের উদ্যোগে বিতরণ

0
132

মিজানুর রহমান মিলন,সৈয়দপুর: নীলফামারীর সৈয়দপুরে অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঈদ উপহার ভিজিএফের চাল পুরোপুরি বিতরন না করে খাদ্যগুদামে মজুদ করা হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা প্রশাসন সৈয়দপুর স্থানীয় খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্রের খাদ্য গুদাম থেকে প্রায় সাড়ে ৮ মেট্রিক টন চাল উদ্ধার করা হয়েছে। পরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিনের হস্তক্ষেপে উপজেলা প্রশাসন প্রকৃত দুস্থদের তালিকা করে তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ওই চাল। বুধবার (১৯ এপ্রিল) উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। সৈয়দপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়,৷ পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঈদ উপহার হিসেবে অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য বোতলাগাড়ি ইউনিয়নে ভিজিএফের ৫ হাজার ২১৩ টি কার্ডের বিপরীতে ৫২ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় উপজেলা প্রসাশন। এর মধ্যে সোম ও মঙ্গলবার (১৭ ও ১৮ এপ্রিল) বিতরণের জন্য মোট বরাদ্দের সাড়ে ৮ মেট্রিকটিন চাল খাদ্য গুদামে রেখে বাকি চাল তুলে নেন বোতলাগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুন। কিন্তু চাল বিতরণের নির্ধারিত সময় পার হলেও গুদামে রাখা অবশিষ্ট চাল না তোলায় খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুনকে তাগাদা দেন। অপর দিকে ভিজিএফের চাল না পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মনোকস্ট নিয়ে ফেরত যান শত শত নারী পুরুষ। বরাদ্দর বিপুল পরিমাণ চাল গেল কোথায়, এবিষয়টি নিয়ে ব্যাপক কানাঘুষা চলতে থাকে গোটা ইউনিয়নে। এক কান দুই কান করতে করতে জানা যায় স্থানীয় খাদ্য গুদামে বিতরণের জন্য বরাদ্দ হওয়া সাড়ে ৮ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন না করে খাদ্য গুদামে রাখা হয়েছে। পরে বিষয়টি খোলাশা হলে মঙ্গলবার রাতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত হন ওই খাদ্য গুদামে। পরে ওই চাল খাদ্য গুদাম থেকে তুলে প্রশাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৮১০ জন দুস্থের মাঝে বিতরণ করা হয়। বোতলাগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ভিজিএফের চাল বিতরণকালে এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম, বোতলাগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. আব্দুল মান্নান। ওইসব চাল সুষ্ঠুভাবে বিতরণের জন্য ট্যাগ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান। তাকে সহযোগিতা করেন উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহার চৌধুরী, বোতলাগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী ও বোতলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক। চাল বিতরণে অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্যাগ অফিসার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। আর তাঁকে সহযোগিতা করা অন্যান্যরাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

চাল নিতে আসা ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা শহানাজ পারভীন, জোবেদা বেগম,আনোয়ার হোসেনলসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন ,আমরা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও স্লিপ পাইনি। অথচ পরে শুনি এতগুলো চাল বিতরণ না করেই আত্মসাতের উদ্দেশ্যে গুদামে রাখা হয়েছিল। তবে দেড়িতে হলেও চাল পেয়ে আমরা খুশি।

সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, চাল বিতরণের প্রথম দিনে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুন প্রকৃত দুস্থদের না দিয়ে দুই শতাধিক ভিজিএফের চাল বিতরণের স্লিপ বিক্রি করে। সেই স্লিপগুলোর বিপরীতে শিশুদের দিয়ে চাল তুলে অবৈধভাবে মজুদ করা হচ্ছিল একটি টেলিকম দোকান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকানটি সীলগালা করেছে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. আমিনুল ইসলাম। এছাড়া মঙ্গলবার বিকেলে ওই ইউনিয়ন পরিষদের পাশের একটি এলাকায় মাটি খুড়ে ওই ইউনিয়নে বিতরণের জন্য ভিজিএফের চাল উদ্ধার করা হয়।

উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন আরও বলেন, ওই ইউপি চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম করে যাচ্ছে। গত বছর একই ইউনিয়নের ভিজিএফের এক ট্রাক চাল উদ্ধার করা হয় নীলফামারী সদর থেকে।
এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরকার জুন বলেন, আমরা সঠিকভাবেই চাল বিতরণ করেছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমার বিরুদ্ধে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র করে আসছে একটি পক্ষ। এটিও তাঁদের ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ ।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্রতা ফয়সাল রায়হান বলেন, খাদ্যগুদামে রাখা চালের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এর সাথে খাদ্যগুদামের কর্মকর্তাও জড়িত কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তে যদি কেউ দোষী প্রমানিত হন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here