খবর ৭১: শেষ বিকেলে ১০ ওভার ব্যাটিং করতে হলো বাংলাদেশকে। শুরুতে ধাক্কা খেলেও তামিম ইকবাল আর মুমিনুল হক দেখেশুনে বাকি সময়টা পার করে দেবেন বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু দিনের শেষ বলে আউট হয়ে বিপদ বাড়ালেন তামিম।
মিরপুর টেস্টে আইরিশদের ২১৪ রানে অলআউট করার পর ২ উইকেটে ৩৪ রান নিয়ে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। শান্ত শূন্য আর তামিম আউট হয়েছেন ২১ করে। ১২ রানে অপরাজিত আছেন মুমিনুল।
তামিমের সঙ্গে স্পেশালিস্ট ওপেনার নেই। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে নাজমুল হোসেন শান্তকে ওপেনার হিসেবে খেলতে হবে, বোঝা গিয়েছিল একাদশ দেখেই।
তবে ফিল্ডিংয়ের সময় তামিম কাঁধে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়ায় মনে হচ্ছিল, ওপেনিং পজিশনে আরেকটি পরিবর্তন আসতে পারে। কেননা তামিম চোটে পড়লে বাধ্য হয়েই নিচের একজনকে ওপেন করতে হবে।
সেটা হয়নি। শঙ্কা কাটিয়ে ওপেনিংয়ে নেমেছেন তামিম। যদিও নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ওপেনিং জুটিটা বড় হয়নি তার। দলীয় ২ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মার্ক এডায়ারের বলে শান্ত বোল্ড হন, ফেরেন গোল্ডেন ডাকে।
এরপর তামিম আর মুমিনুল ৫৫ বল খেলে জুটি দাঁড় করিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু ৩২ রানের জুটিটি ভাঙে দিনের শেষ বলে ম্যাকব্রিনের ঘূর্ণিতে ডিফেন্ড করতে গিয়ে তামিম দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিলে।
এর আগে ক্যারিয়ারে আরও একবার ফাইফারের দেখা পেলেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের ঘূর্ণি বিষে নীল হলো আয়ারল্যান্ড। মিরপুর টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৭৭.২ ওভার খেলে ২১৪ রানেই গুটিয়ে গেছে আইরিশদের ইনিংস।
একটা সময় বেশ ভালো অবস্থানে ছিল আয়ারল্যান্ড। ৩ উইকেটে তুলে ফেলেছিল ১২২ রান। সেখান থেকে ৬ উইকেট হারিয়ে ১২৪। অর্থাৎ ১২২ থেকে ১২৪- এই ২ রানে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারিয়ে ফেলে আয়ারল্যান্ড। সৌজন্যে তাইজুল ইসলাম এবং মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণি বোলিং।
৪৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ধুঁকতে থাকা আয়ারল্যান্ডকে টেনে তোলার চেষ্টা শুরু করেন দুই অভিষিক্ত হ্যারি টেক্টর এবং কার্টিস ক্যাম্ফার। দু’জন মিলে গড়ে তোলেন ৮৪ রানের অনবদ্য জুটি।
মনে হচ্ছিল, বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে আইরিশরা। কিন্তু দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার খানিক আগেই সফরকারীদের সর্বনাশ ডেকে আনার কাজটি করেন দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম এবং মেহেদী হাসান মিরাজ।
অভিষেকেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে ফেলা হ্যারি টেক্টরকে সরাসরি বোল্ড করে প্রথমে সাজঘরের পথ দেখান। ৯২ বল খেলে ৫০ রান করে বিদায় নেন টেক্টর। দলীয় রান তখন ১২২। এরপরই ১২৩ রানের মাথায় তাইজুল ইসলামের বলে তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান পিটার মুর।
১২৪ রানের মাথায় ৩৪ রান করা কার্টিস ক্যাম্ফারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে আউট করেন তাইজুল ইসলাম। ৫৫ বল কাটিয়ে ১৯ রান করা অ্যান্ডি ম্যাকব্রিন পেসার এবাদত হোসেনকে পুল খেলতে গিয়ে হন মুমিনুল হকের ক্যাচ।
লরকান টাকার দেখেশুনে খেলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। দলীয় ১৯৯ রানের মাথায় তাইজুলের বলে লিটন দাসের দুর্দান্ত স্টাম্পিংয়ের শিকার হতে হয় তাকে। ৭৪ বলে টাকার করেন ৩৪ রান।
শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে ধুঁকতে শুরু করে আয়ারল্যান্ড। অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নি চেষ্টা করেছিলেন বিপর্যয় কাটানোর; কিন্তু তাইজুল ইসলামের স্পিন ঘূর্ণিতে ধরাশায়ী হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনিও। ৫০ বলে ১৬ রান করে আউট হন তিনি। এই ৩ উইকেট হারিয়ে ৬৫ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় আয়ারল্যান্ড।
টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর শুরু থেকেই বাংলাদেশের পেসারদের তোপের মুখে পড়ে আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দল। বিশেষ করে দুই পেসার শরিফুল ইসলাম এবং এবাদত হোসেনের।
এই দুই পেসারের আগুনে বোলিংয়ের মুখে শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারায় আয়ারল্যান্ড। ম্যাচের ৫ম ওভারেই দলীয় ১১ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় আইরিশরা। ১০ বলে ৫ রান করে শরিফুলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান মারে কমিন্স।
অন্য ওপেনার জেমস ম্যাককলাম অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নিকে নিয়ে জুটি বাঁধার চেষ্টা করেন। দলীয় ২৭ রানের মাথায় আউট হয়ে যান জেমস ম্যাককলামও। এবাদত হোসেনের বলে সেকেন্ড স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। তার আগে করেন ৩৪ বলে ১৫ রান।
তাইজুল ইসলাম ৫৮ রান দিয়ে নেন ৫টি উইকেট। এটি তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম ফাইফার। এবাদত হোসেন আর মেহেদি হাসান মিরাজ নেন দুটি করে উইকেট।