খবর ৭১: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব আসনে ব্যালটে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত বিষয়ে বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নির্বাচন কমিশনের এ ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে আমাদের একটুও আগ্রহ নেই। কারণ আমরা পরিষ্কার বলেছি, জাতির মূল সংকট নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে। নির্বাচনকালীন কোন ধরনের সরকার থাকবে সেটাই প্রধান আলোচ্য বিষয়। বিগত দিনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কারণে আমাদের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে, স্বাধীনতার মূল চেতনা থেকে দেশ বহু দূরে সরে এসেছে।
সোমবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর লেডিস ক্লাবে ইফতারপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে বিএনপির উদ্যোগে এ ইফতার ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়। এবারের ইফতার মাহফিলে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে আমন্ত্রণ জানায়নি বিএনপি।
এদিন দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জাহাংগীর আলম আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ভোট হবে ব্যালট পেপারে ও স্বচ্ছ ব্যালটবাক্সে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অনেকগুলো রাজনৈতিক দল একমত হয়ে যে কথাগুলো বলছি তা হচ্ছে- যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয় তাদের অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই কমিশনের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলাম। যুদ্ধের যে চেতনা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল সব আজ ভূলুণ্ঠিত। আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছি, অতীতের বাকশালী শাসনব্যবস্থার মতো আবারও জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েমের হীন চক্রান্ত চলছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এদেশের জনগণ কখনোই একনায়কতন্ত্র-স্বৈরতন্ত্র মেনে নেয়নি। আজ বাংলাদেশের মানুষ যে অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রাম শুরু করেছেন আমরা বিশ্বাস করি সেই সংগ্রামে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি নিজ নিজ অবস্থান থেকে শরিক হবেন এবং অধিকার আদায়ে সোচ্চার হবেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আজকে সারাদেশে একটি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। শুধু বিএনপির কথা বলছি না, সাধারণ কোনো দলের কথাও বলছি না। আজকে সাধারণ মানুষও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি ধোয়া তুলে জনগণকে বোকা বানিয়ে দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে। দেশে আজকে দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে বিদেশি পত্রিকাগুলোও তা তুলে ধরছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, মতিউর রহমান এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদক। তার নামে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা দিয়েছে। পত্রিকাটির রিপোর্টার শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। যদিও তারা জামিন পেয়েছেন। আপনাদের মনে আছে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে অত্যাচার-নির্যাতন করে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। নওগাঁর একজন নারী যিনি সরকারি কর্মচারি, কী কারণে র্যাব তাকে তুলে নিয়ে গেল এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তুলে নেওয়ার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ওই নারী নির্যাতনে মারা গেছেন। অর্থাৎ তাকে মেরে ফেলা হলো।
ইফতারের পূর্বে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ওলামা দলের মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় এতে আরও অংশ নেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, নিতাই রায় চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আহমেদ আযম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, মো. আবদুস সালাম, মিজানুর রহমান মিনু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মিডিয়া সেলের জহির উদ্দিন স্বপন, শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।
জোট নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য দলের আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি। অন্যান্য রাজনীতিবিদদের মধ্যে এলডিপির অলি আহমদ, জেএসডির আ স ম আব্দুর রব, মিসেস তানিয়া রব, রেদোয়ান আহমেদ, গণফোরামের মোস্তফা মোহসীন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের নূরুল আমিন বেপারী, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, এসএম শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ ভাসানী) আজহারুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির (জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, বাংলাদেশ এলডিপির আব্দুল গণি, শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তের মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুর রকিব, এনডিপির ক্বারি আবু তাহের, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, গণঅধিকার পরিষদের মুহাম্মদ রাশেদ খান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির গরিবে নেওয়াজ, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নূরুল ইসলাম ও মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মন্ডল প্রমুখ।