ত্রুটি নিয়ে জন্ম নিচ্ছে দেশের ৭ শতাংশ নবজাতক

0
145

খবর৭১ঃ
দেশে প্রতি বছর জন্ম নেওয়া নবজাতকদের মধ্যে শতকরা ৭ জন শারীরিক বিভিন্ন ত্রুটি নিয়ে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির নবজাতক বিভাগে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে আসা ১১ হাজার ২৩২ জনের ওপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়।

রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে বিশ্ব জন্মগত ত্রুটি দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সেমিনার ও আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

গবেষণা বলছে- গত ৮ বছরে বিএসএমএমইউর নবজাতক বিভাগে শারীরিক বিভিন্ন ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে ৭৮৯ জন শিশু। এই সংখ্যা গত ৮ বছরে চিকিৎসা নিতে আসা মোট শিশুর ৭ দশমিক ০২ শতাংশ; যা উন্নত বিশ্বে শিশুর জন্মগত ত্রুটির হারের চেয়ে বেশি।

সেমিনারে জানানো হয়, পৃথিবীব্যাপী জন্মগত ত্রুটির হার প্রতি ১০০ জনে ৩ থেকে ৬ জন (৩ থেকে ৬ শতাংশ)। সারা বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জন্মগত ত্রুটির হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছর শুধুমাত্র জন্মগত ত্রুটির জন্য জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ শিশু মারা যায়। শিশু মৃত্যুর এই হার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অনেকাংশে বিরূপ প্রভাব ফেলে।

আলোচনা সভায় জন্মগত ত্রুটির হার নির্ণয়, ত্রুটির কারণ, প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনার ওপর আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। উপাচার্য নবজাতকদের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ এবং এর চিকিৎসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন উন্নততর চিকিৎসা সেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে একের পর এক নতুন ল্যাব প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে। জেনেটিক ল্যাবও প্রতিষ্ঠা করা হবে। তবে জন্মগত ত্রুটির ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডারের (তৃতীয় লিঙ্গ) বিষয়ে করণীয় কি হতে পারে সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

উপাচার্য আরও বলেন, রোগীদের সুবিধার্থে ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণের বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গরূপে ডাবল শিফটে ওটি (অস্ত্রোপচার বা সার্জারি) কার্যক্রম চালু করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় অ্যানেসথেসিওলজিস্ট নিশ্চিত করা হবে; যাতে করে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার অভাবে ওটি কার্যক্রম সেবা ব্যাহত না হয়।

নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কুমার দে’র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জন্মগত ক্রটির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দেন বিসিপিএসের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা। আলোচনা সভায় ফিটো-ম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাহরীন আক্তার, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. তোসাদ্দেক হোসেন সিদ্দিকী, লাইন ডিরেক্টর ডা. সাইদুজ্জামান, ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ডা. নুরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষক ও চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন। জন্মগত ত্রুটি সম্পর্কিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহকারী অধ্যাপক ডা. ইসমাত জাহান।

আলোচনা সভায় জন্মগত ত্রুটি চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন গর্ভ-পূর্ববর্তী এবং গর্ভকালীন চেকআপ করা, গর্ভকালীন (১৮ থেকে ২২ সপ্তাহের মধ্যে) আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে জন্মগত ত্রুটি নির্ধারণ করা। গর্ভকালীন অসংক্রামক ব্যাধি যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ, অল্প বয়সে এবং অধিক বয়সে গর্ভনিরোধ, আয়োডিনযুক্ত লবণের মতো খাবারের সঙ্গে ফলিক অ্যাসিড মেশানোর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ সম্ভব।

উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও জন্মগত ত্রুটি নিয়ে একটি প্রকল্প রয়েছে। সেটি হলো ন্যাশনাল নিওনেটাল অ্যান্ড পেরিনেটাল ডাটাবেজ (এনএনপিডি) অ্যান্ড নিউবর্ন বার্থ ডিফেক্ট (এনবিবিডি) সার্ভিলেন্স ইন বাংলাদেশ অথবা সংক্ষেপে বার্থ ডিফেক্ট সার্ভিলেন্স ইন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ২০টি সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ইনটিস্টটিউটে এই প্রকল্প পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রকল্পটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এসইএআরও এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সহায়তা করে। আর বিএসএমএমইউর নবজাতক বিভাগ প্রকল্পটির কার্যক্রম প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here