স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট নাগরিক চাই: প্রধানমন্ত্রী

0
144

খবর৭১ঃ
স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট নাগরিক চাই: প্রধানমন্ত্রী
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট নাগরিক প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকের শিশুদের মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কারণ তারাই হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট জনগোষ্ঠী’।শিশুরা যেন মানবিক ও অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল অনুভব নিয়ে গড়ে উঠে সেজন্য নজর দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শিশুদের উদ্দেশে বলেন, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, শিক্ষকদের কথা মান্য করা, অভিভাবকদের কথা মান্য করা- প্রত্যেক শিশুদের এসব নিয়ম মেনে চলতে হবে। সবাইকেই মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন হতে হবে। যারা প্রতিবন্ধী বা অক্ষম তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত জাতীয় শিশু দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ দিনের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিশু প্রতিনিধি স্নেহা ইসলাম।

বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান ও জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের ভালোবাসতেন। শিশুদের জন্য তার অত্যন্ত দরদ ছিল। শিশুদের সঙ্গে খেলা করতে তিনি খুব পছন্দ করতেন। আমরা এজন্য তার জন্মদিনটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি। শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যত। তারা যেন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে- সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

তিনি বলেন, টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান। এ মাটিতে তিনি বড় হয়েছেন। এই মাটিতে তিনি শায়িত আছেন। নিজের জীবনটাকে তিনি উৎসর্গ করেছেন বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য। তার ভেতরে যে মানবিকতা রয়েছে, মানুষের প্রতি যে দরদ- শিশুকাল থেকেই সেটি জানা গেছে। তিনি যখন স্কুলে পড়তেন তখন থেকেই দরিদ্র কোনো ছেলের বই নেই তাকে তিনি নিজের বই দিয়ে দিয়েছেন। নিজের গায়ের কাপড় খুলে দরিদ্র মানুষকে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি দুর্ভিক্ষের সময় নিজের গোলার ধান পর্যন্ত মানুষকে দিয়ে দিতেন। তার ভেতরে সেই মানবিকতা ছোটবেলা থেকেই আমার দাদা-দাদি লক্ষ্য করেছেন। বড় হয়ে তিনি এ দেশের মানুষ যারা একেবারে শোষিত-বঞ্চিত ছিল, একবেলা খাবার পেত না, যাদের পরনে কাপড় ছিল না, রোগের চিকিৎসা পেত না, ঘরবাড়ি ছিল না- সেসব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্যই কিন্তু তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আজ মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে পারি। সেই ৪৮ সাল থেকেই এ আন্দোলন তিনিই (বঙ্গবন্ধু) শুরু করেছিলেন। তারই নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা এবং স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়। কাজেই জাতির পিতার এই জন্মদিনটিকে শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি। তিনি যখন আমাদের স্বাধীনতা এনে দেন এর মাত্র নয় মাসের মধ্যে তিনি একটি সংবিধান দিয়েছিলেন। সেই সংবিধানেও কিন্তু শিশু অধিকারের কথা বলা আছে। তিনিই প্রথম আমাদের দেশে প্রায় ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেন। শিশুদের সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন করেন। জাতীয় শিশু আইন-১৯৭৪ তিনিই প্রণয়ন করে দিয়ে যান। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক; যা সংবিধানে দেওয়া আছে। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ অবৈতনিক করে দেন এবং মেয়েদের শিক্ষাকেও অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন। শিশুদের জন্য কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন সেন্টার করা হয়েছে, যা বর্তমানে সরকারি শিশু পরিবার হিসেবে পরিচিত। এভাবেই তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে এ দেশের শিশুদের কথা বিবেচনা করে ও শিশুদের দিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। আমরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০, প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন-২০০১ প্রণয়ন করি। পরবর্তীতে আবার যখন সরকারে আসি আমরা এদেশে শিশুদের জন্য জাতীয় শিশু নীতি-২০১১, পরিবারিক সুরক্ষা আইন-২০১০, মাতৃদুগ্ধের বিকল্প শিশু খাদ্য বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও তার ব্যবহারে সরঞ্জামাদি বিপণন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ প্রণয়ন করেছি। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩, নারী ও শিশু প্রতিহিংসা এবং সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩ থেকে ২০২৫, উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন ২০১৪, বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আইন ২০১৮, বাল্যবিবাহ নিরোধ কল্পে জাতীয় মহাপরিকল্পনা ২০১৮ থেকে ২০৩০ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন সংশোধন আইন ২০২০ প্রণয়ন করে নারী ও শিশুদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করি।

শিশুদের শিক্ষার অধিকার ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ২৬ হাজার ১৯৬টি সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত কমিউনিটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আমরা সরকারিকরণ করে দিয়েছি। আমরা শিশুদের জন্য বিনামূল্যে বই দিয়েছি। শুধু তাই না, আমরা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ শিশুকে উপবৃত্তি দিচ্ছি। সরাসরি মায়ের নামে তাদের সেই উপবৃত্তির টাকা যাচ্ছে। আর সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থী আমাদের কাছ থেকে বৃত্তি, উপবৃত্তি পাচ্ছে, গবেষণার জন্য অর্থ পাচ্ছে। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছি, যাতে তারা পড়াশোনায় মনযোগ দেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কম্পিউটার শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য দরকার স্মার্ট জনগোষ্ঠী। শিশুকাল থেকেই যেন তারা তা শিখতে পারে, তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারের কোডিং পদ্ধতি শিখানোর কার্যক্রম ‘লারলিং অ্যাপ্রোচ’ প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দক্ষতা বিকাশের উদ্যোগও আমরা গ্রহণ করেছি। এভাবেই একদিকে আমরা যেমন শিশুদের শিক্ষা ও দক্ষ হওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি, অপরদিকে শিশুদের সুরক্ষার জন্যও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি আমাদের শিশুদের বলব, যে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই, ২০৪১ সালে সেটাই হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আজকের শিশুরাইতো হবে আগামী দিনের স্মার্ট জনগোষ্ঠী। যারা এদেশটাকে গড়ে তুলবে। কাজেই আজকের এ শিশু দিবসের যে প্রতিপাদ্য যেটা অত্যন্ত চমৎকার বিষয় নেওয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনের এ প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্ন রঙিন’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে এ ধরনের একটি সত্যিকার সময়োপযোগী একটি প্রতিপাদ্য গ্রহণ করার জন্য।

তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, অন্ধকে অন্ধ বলিও না। পঙ্গুকে পঙ্গু বলিও না। এটা তো ছোটবেলার শিক্ষা। কাজেই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। আমরা প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেই। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে আমরা বৃত্তিও দিয়ে থাকি। আমরা সবাই এই সমাজের, সবাই এই সংসারের। মানুষের জন্য কিছু করা, মানুষের জন্য ত্যাগ করা- এটা মহৎ একটা কাজ। জাতির পিতা বলেছেন, মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন।

খেলাধুলা ও শরীরচর্চা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ফুটবল খেলতেন। আমার দাদাও খেলতেন। আমার ভাইয়েরা তো খেলতেনই। আমাদের ছেলেমেয়ে, নাতিপুতিরাও ফুটবল খেলে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় খেলাধুলা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করলে শরীর ভালো থাকবে, মন ভালো থাকবে এবং সবাই একটি আত্মবিশ্বাস নিয়ে গড়ে উঠবে- সেটাই আমি চাই।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী রবিঠাকুরের কবিতার কয়েকটি লাইন উচ্চারণ করে বলেন, জাতির পিতা সবসময় এই কবিতাটি আবৃত্তি করতেন- ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশ্বাসে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’।

জাতির পিতা আমাদের মাঝে আজ নেই; কিন্তু তার আাদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিযে যাব। আগামী দিনের বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ- যে বাংলাদেশে কোনো শিশুই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে ন। কোনো মানুষই ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হবে না, প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে এ দেশটাকে উন্নতভাবে গড়ে তুলব।

কবি সুকান্তের কবিতার ভাষায় তিনি বলেন- ‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি’- নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার। আমি সব শিশুদের মঙ্গল কামনা করি।

শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন শিশু প্রতিনিধি লুবাবা ত্বহা জামান এবং এএল সরফুদ্দিন।

এরপর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও অসচ্ছল মেধাবী শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে আর্থিক অনুদান বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে স্মারক উপহার দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী দর্শক সারিতে আসন গ্রহণ করেন এবং কাব্যগীতি আলেখ্যানুষ্ঠান, বঙ্গবন্ধু ও শিশু অধিকার বিষয়ক প্রমাণ্যচিত্র উপভোগ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শিশুশিল্পীদের সঙ্গে ফটোসেশন করেন এবং সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণে বইমেলার উদ্বোধন ও স্টল পরিদর্শন করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here