মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী):
বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সৈয়দপুরের মাংসের বাজারও। ব্যবসায়ীরা গরুর মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে কোনো যৌক্তিক ঘোষণা ছাড়াই মাংসের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে তাদের মূল্য বৃদ্ধির কারসাজিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন ক্রেতাসাধারণ। সকালে একদর থাকলেও দুপুরে আরেক দর, তার উপরে হাড় ও অতিরিক্ত চর্বি মিশিয়ে ক্রেতাদের সাথে নতুন প্রতারণায় সামিল হয়েছে মাংস ব্যবসায়ীর একশ্রেণীর চক্র। তবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাংসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বীকার করেছে সৈয়দপুর মাংস ব্যবসায়ী সমিতি। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে সাধারণ ক্রেতাদের বাক-বিতন্ডা হচ্ছে হরহামেশাই।
সূত্র মতে, সৈয়দপুর শহর ও গ্রামাঞ্চলে ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক ভাতের রেস্তোরাঁ রয়েছে। এসব রেস্তোরাঁর পাশাপাশি উপজেলার স্বচ্ছল পরিবারে নিত্যদিনের খাবারের মেন্যুতে গরুর মাংস থাকে। ফলে এ উপজেলায় প্রতিদিন মাংসের চাহিদা গড়ে প্রায় ৭ থেকে ৮ টন। বাজারের চাহিদা মেটাতে স্থানীয় মাংস ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন আশেপাশের জেলার বিভিন্ন হাটবাজার থেকে পর্যাপ্ত গরু কিনে তা জবাইয়ের জন্য প্রস্তুত করে রাখেন। সে হিসেবে শহরের পশু জবাইখানাসহ বিভিন্ন এলাকা প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০টি গরু জবাই করা হয়। পরে ওইসব মাংস দোকানগুলোতে আসা মাত্র সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাংসের দর ঠিক থাকলেও দুপুরের পর সিন্ডিকেটের নির্ধারণ করা দরে বিক্রি করা হয়। এনিয়ে মাংস ব্যবসায়ীদের একটি অংশ পড়েছেন চরম বিবতকর অবস্থায়। গত এক মাস ধরে এ অবস্থা চলছে শহরের মাংসের বাজারে।
ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ, হাটবাজারগুলোয় গরুর পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং বাজারমূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা সরবরাহ কম ও গরুর দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য খরচের অজুহাতে হঠাৎ করে মাংসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ক্রেতারা আগের দামে বিক্রির কথা বললেও মাংস ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। তারা পূর্বের দর ৬০০ থেকে ৬২০ টাকার স্থলে বর্তমানে প্রতি কেজি গরু মাংস ৬৬০ থেকে ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। বিশেষ বিশেষ দিনে তারা দাম বাড়িয়ে ৭০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি করছে ওইসব মাংস ব্যবসায়ীরা। ফলে মাংস ব্যবসায়ীরা তাদের ‘সিন্ডিকেট দরে’ প্রতিদিন সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অহেতুক এমন মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই ক্রেতাদের সঙ্গে বাগবিতন্ডার ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
এ ব্যাপারে মাংস ক্রেতা ব্যবসায়ী এজে চৌধুরী বলেন, গত এক মাস ধরে মাংসের মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, এর আগে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬২০ টাকায় কেজি দরে কিনলেও এখন তা ৬৬০ থেকে ৬৮০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। প্রিন্টিং ব্যবসায়ী খালিদ আরমান জানান, মাংসের দাম বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা ওজনের সময় প্রতি কেজিতে কমপক্ষে ২৫০ গ্রাম হাড় ও চর্বি কৌশলে ঢুকিয়ে দেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তারা বলেন হাড়-চর্বি কি আমরা বাড়ি নিয়ে যাব? তাই শবে বরাতে গরুর মাংসের পরিবর্তে গরীবের আমিষ মুরগির মাংস কিনেছি। বাজারে আসা গৃহিণী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মাংস কিনতে গিয়েছিলাম, বিক্রেতা দাম চাইল প্রতি কেজি ৬৭০ টাকা, দাম শুনে মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা । ফলে মাংস না কিনেই গরীবের জন্য সহজ উপায়ের খাদ্য ব্রয়লার মুরগী কিনলাম।
সূত্র মতে, শহর ও গ্রাম মিলিয়ে সৈয়দপুরে প্রায় শতাধিক মাংসের দোকান রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ওইসব ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কোনো কারণ ছাড়াই মাংসের দাম বাড়াচ্ছেন। প্রথমে প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বাড়িয়ে ৬৪০ এবং পরে আরও ২০ টাকা বাড়িয়ে ৬৬০ টাকা আবার কোথাও ৬৭০/৬৮০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ওই ব্যবসায়ীদের একটি অংশ সকালে একদর বিক্রি করলেও দুপুরের বাড়িয়ে দিচ্ছেন মাংসের দাম। তাদের কারণে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন স্বচ্ছতার সাথে ব্যবসা করা মাংস ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। তারা জানান, কয়েকজন ব্যবসায়ীর কারণে আমাদের বদনাম হচ্ছে। তাদের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করলে ওইসব সিন্ডিকেট সদস্যরা কোন কর্ণপাতই করছেন না।
মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোন যৌক্তিক ঘোষণা ছাড়াই সিন্ডিকেট করে মাংসের মূল্য বৃদ্ধি করা ঠিক হয়নি । কারণ হাটে গরুর দাম এখনও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তাদের অভিযোগ, সাংঠনিক দূর্বলতা ও নিয়মনীতি না মানার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য। এখন থেকে যদি তাদের লাগাম টেনে ধরা না হয় তাহলে আসছে রমজানে এর বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে।
এদিকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ অস্বীকার করেছে সৈয়দপুর মাংস ব্যবসায়ী সমিতি। সংগঠনের সভাপতি নাদিম ওরফে ছোটু বলেন, সিন্ডিকেট নয়, বাজারে গরুর সরবরাহ কম থাকায় হাটে গরুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া অন্যান্য খরচও বেড়ে যাওয়ায় মাংসের দাম বাড়াতে হয়েছে। মাংসে অতিরিক্ত চর্বি ও হাড় প্রদানের বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়ে বলেন, অন্যান্য শহরের তুলনায় আমাদের এখানে দাম এখনও অনেক কম।