খেজুরের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা

0
447

খবর ৭১:রোজার আগেই বাজারে খেজুরের দাম বেড়ে গেছে। গত বছরের একইসময়ের চেয়ে খেজুর কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খেজুরের দাম আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল শুক্রবার (৩ মার্চ) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে খেজুর বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজরের ফলের দোকানে খেজুরের বিভিন্ন জাতের মধ্যে বাপাশ ৩০০ টাকা, বড়ই খেজুর ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, তিউনিশিয়ার খেজুর ৩৫০ টাকা, আজোয়া ৬৫০ থেকে ১০০০ টাকা, সৌদি মরিয়ম সুপরি ৬০০ টাকা, ইরানি মরিয়ম ৮০০ টাকা, কালমি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা ও মাবরুম খেজুর ৮০০ থেকে ৯০০ টকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

কারওয়ান বাজারের ফুটপাতে মাবরুর মরিয়ম (সৌদি) ৭০০ টাকা, সৌদির কালমি ৬৫০ টাকা, ইরানি মরিয়ম ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, মেরজুল ৬৫০ থেকে ১০৫০ টাকা, সৌদির সুপরি ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা, আজোয়া ৬৫০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা, বড়ই খেজুর ২৪০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

কারওয়ান বাজারের ‘আল্লাহর দান’ ফল বিতানের কর্মী মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার খেজুরের এলসি কম। দেশে ডলার সংকট রয়েছে। এসব কারণে খেজুরের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সময় সৌদিতে হজ হয়নি। ফলে সেখানে খেজুরের দাম কম ছিলো কিন্তু এখন করোনা নেই, হজ হচ্ছে। সে কারণে সৌদিতেই খেজুরের দাম বেশি। এ কারণে দেশের বাজারেও খেজুরের দাম বেড়েছে।’

ফুটপাতের খেজুর বিক্রিতা বাবুল বলেন, ‘আমদানি যদি আরও কমে যায় তাহলে সামনে খেজুরের দাম আরও বেড়ে যাবে। যে দামে বিক্রি করছি ঘাটেও একই দাম। হুটহাট করে দাম বেড়ে যায়। এবার দামে স্থিরতা নেই। তবে এবার খেজুর ভালো।’

বিক্রেতাদের দাবি, করোনার আগে বর্তমানের দামেই খেজুর বিক্রি হতো। দাম কমেছিলো শুধু করোনার সময়ে।

মহাখালীতে একটি ফলের দোকানে দেখা গেছে, আজোয়া খেজুর ৭০০ টাকা, ছড়া ৫০০ টাকা ও বড়ই খেজুর ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ফলের দোকানি রিটন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার খেজুরের দাম ডাবল। গতবছর আজোয়া ৪০০, কমলে খেজুর ৪০০, ছড়া ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি।’

আমদানিকারকরা এবার খেজুরের দাম বাড়ার কারণ হিসাবে বাড়তি কর ও ডলার সংকেটের কথা জানান।

কারওয়ান বাজারে খেজুর কিনতে এসেছিলে শহীদুল ইসলাম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এবার খেজুরের দাম অনেক বেশি। গত বছরের চেয়ে কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি নিচ্ছে।’

মৌসুমি ইসলাম নামের আরেক গৃহিণী বলেন, ‘এবার মনে হয় খেজুর কম খেতে হবে। গত বছরের চেয়ে খেজুরের দামও বাজারে বেড়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ চলবো কিভাবে?’

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে সারা বছরে খেজুরের চাহিদা এক লাখ টন। রমজানে ৫০ হাজার টন। কিন্তু এ বছর আমদানি বেশি কমেছে। গত তিন মাসে (নভেম্বর-জানুয়ারি) খেজুর আমদানি হয়েছে ২২ হাজার ৭০০ টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি ছিলো ৪০ হাজার ৮০০ টনের বেশি। অর্থাৎ এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে এ বছর আমদানি প্রায় ৪৫ শতাংশ কমেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ইরাক ছাড়াও সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, জর্ডান ও মিশর থেকেও বাংলাদেশে খেজুর আসে। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ইরাকের জাহেদী খেজুর। যা বাংলা খেজুর নামের গ্রামগঞ্জে কেজি দরে বিক্রি হয়।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুরটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শামসুল বলেন, ‘বাংলাদেশে খেজুরের সবচেয়ে বড় চালান আসে ইরাক থেকে। এজন্য প্রায় একমাস সময় লাগে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকেও আমদানি করা খেজুর চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ঢোকে দেশে। মিশরের অল্প কিছু খেজুর আসে বিমানে। রমজানের জন্য ইতিমধ্যে খেজুরের এলসি প্রায় শেষ করে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সার্বিকভাবে এ বছর খেজুর খুব কম আমদানি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ইরাকসহ প্রায় সব দেশে খেজুরের দামও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পাশপাশি নভেম্বর-ডিসেম্বরে যখন এসব এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি হয় তখন ডলারের রেট অনেক বেশি ছিলো। এসবের প্রভাব খেজুরের দামে পড়েছে। দাম ও খরচ বেশি হওয়াতে লোকসানের শঙ্কায় অনেকে এ বছর খেজুর আমদানি করেনি। আবার বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ায় মানুষ খরচ অনেক বেড়েছে। সেক্ষেত্রে ফলের বিক্রিও কমে গেছে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ। ফলে খেজুরের চাহিদাও কম থাকার শঙ্কা রয়েছে।’

রোজা উপলক্ষে আনা খেজুর অবশিষ্ট থাকলে সেসব চড়া ব্যয়ে হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয় জানিয়ে শামসুল হক বলেন, ‘এ কারণে চড়া দামে খেজুর এনে ঝুঁকি নিতে চাননি অনেক আমদানিকারক। সবমিলিয়ে এ বছর খেজুরের বাজার কিছুটা অস্থিতিশীল।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here