আন্তজার্তিক ডেস্ক
গ্রিসের এথেন্স থেকে উত্তরাঞ্চলীয় শহর থেসালোনিকিগামী একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে থেসালোনিকি থেকে লারিসাগামী একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫৭ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে ৩৫০ যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনটির প্রথম দুটি বগিতে আগুন ধরে গিয়ে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক গভর্নর।
ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ ও তদন্তের দায়িত্বে থাকা ইলেনি জাগেলিদু বলেছেন, এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭। তাদের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে।
এ ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য রেল শ্রমিকরা সরকারের উদাসীনতাকে দায়ী করে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) একদিনের রেল ধর্মঘট পালন করেন। এথেন্সে টানা দ্বিতীয় দিন প্রতিবাদে নেমে আসেন দুই হাজারের উপর মানুষ। রেলপথের প্রতি গ্রিস সরকারের অবহেলার কারণেই টেম্পেতে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। গ্রিসের দীর্ঘস্থায়ী ঋণ সংকটের কারণে বেসরকারিকরণ অনেক সরকারি সেবার মধ্যে হেলেনিক ট্রেনও ছিল।
এর আগে লারিসা শহরের কাছে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস। তিনি মন্তব্য করেন, মানুষের ভুলই এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তার এ মন্তব্য বিক্ষোভকারীদের আরো উস্কে দেয়।
এরইমধ্যে স্থানীয় স্টেশনমাস্টারের বিরুদ্ধে মানুষ হত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অন্যদিকে, ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন গ্রিসের অবকাঠামো ও পরিবহনমন্ত্রী কোস্টাস কারামানলিস। বুধবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
তিনি এ সময় বলেন, মর্মান্তিক ঘটনা যখন ঘটেছে, তখন কিছু না ঘটার ভান করে কাজ চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি এই ব্যর্থতার দায় নিচ্ছি ও পদ ছেড়ে দিচ্ছি।
গ্রিস সরকার বলছে, দেশের রেল প্রকল্পগুলো দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। রেলপথের সমস্যার কথা সরকারি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন। তারা বেহাল রেলপথ সংস্কারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন।
গ্রিস সরকারের মুখপাত্র জিয়ান্নিস ওইকোনোমো এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা সবাই এই দুঃখজনক ঘটনায় মর্মাহত। এই ঘটনা আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে। সারা দেশে এর ক্ষোভ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন, বিশেষ করে এখন।
তিনি আরও বলেন, উদ্ধারকারী দলগুলো সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ওয়াগনগুলোতে উদ্ধারকাজ আবার শুরু করেছে। কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার কারণ এবং রেল প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণগুলো খতিয়ে দেখবে।
গ্রীসের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন জানিয়েছে, ট্রেন দুটি সংঘর্ষের আগে অন্তত ১২ মিনিট একই লাইনে ছিল। এ সময়ে ট্রেন দুটি প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সংঘর্ষে যাত্রীবাহী ট্রেনের কিছু বগি লাইনচ্যুত হয়। কয়েকটি বগিতে আগুন লেগে বিস্ফোরণ ঘটে।
স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, যখন ট্রেন দুটির সংঘর্ষ হয় তার আগে যাত্রিবাহী ট্রেনটি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে ছুটছিল। তবে মালবাহী ট্রেনটির গতি কেমন ছিল তা জানা যায়নি।