খবর৭১ঃ
ইরানের মধ্যঞ্চলীয় শহর ইস্পাহানের একটি সামরিক কারখানায় গত সপ্তাহে ড্রোন হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলকে দায়ি করে হামলার খবর প্রথম প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এতদিন সরাসরি কাউকে দায়ী না করলেও বৃহস্পতিবার হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে দেশটি।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘস্থায়ী গোপন যুদ্ধের সর্বশেষ পর্ব হিসেবে ইসরায়েলের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইরান।
হামলার পরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের করা মন্তব্যকে সমর্থন করে বৃহস্পতিবার ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা আইএসএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়, তেহরানের পারমাণবিক কার্যকলাপ এবং তার অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে ইরান এবং পশ্চিমের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যে এই হামলাটি হয়েছিল। বিশেষ করে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে রাশিয়াকে দূরপাল্লার ‘আত্মঘাতী ড্রোন’ সরবরাহ এবং ইরানের সরকারবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে এটি হয়েছে।’
জাতিসংঘের প্রধানের কাছে এক চিঠিতে ইরানের জাতিসংঘের দূত আমির সাইদ ইরাভানি বলেছেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে শনিবার রাতের হামলার জন্য দায়ী ইসরায়েল। তবে হামলায় কোনো হতাহত বা গুরুতর ক্ষতি হয়নি।’
চিঠিতে ইরাভানি বলেছেন, ‘ইরান তার জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য তার বৈধ এবং অন্তর্নিহিত অধিকার সংরক্ষণ করে এবং যেখানেই, যখনই প্রয়োজন মনে করে ইহুদিবাদী শাসক (ইসরায়েল) এর যেকোনো হুমকি বা অন্যায়ের প্রতি দৃঢ়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। ইহুদিবাদী শাসক (ইসরায়েল) কর্তৃক গৃহীত এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।’
শনিবারের হামলাটি ইস্পাহানে একটি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। ড্রোনটি প্রতিরোধ করার দাবি করেছে ইরান।
চিরশত্রু ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে বলেছে যে তেহরানের পারমাণবিক বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি রোধে কূটনীতি ব্যর্থ হলে তারা ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ইচ্ছুক, তবে নির্দিষ্ট ঘটনার বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করে না।
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ইরান এবং বিশ্বশক্তির মধ্যে আলোচনা সেপ্টেম্বর থেকে স্থবির হয়ে পড়েছে। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন কর্তৃক পরিত্যক্ত চুক্তির অধীনে, তেহরান নিষেধাজ্ঞাগুলি সহজ করার বিনিময়ে পারমাণবিক কাজ সীমিত করতে সম্মত হয়েছিল।
ইরান অতীতে ইসরায়েলকে ইরানের ভূখণ্ডে এজেন্ট ব্যবহার করে হামলার পরিকল্পনা করার অভিযোগ করেছে।
জুলাইয়ে তেহরান বলেছিল যে তারা ইসরায়েলের জন্য কাজ করা কুর্দি কট্টরপন্থীদের একটি নাশকতাকারী দলকে গ্রেপ্তার করেছে যারা ইস্পাহানে একটি ‘সংবেদনশীল’ প্রতিরক্ষা শিল্প কেন্দ্র উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
ইরানের নুরনিউজ বুধবার বলেছে, ‘ইস্পাহান হামলায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং বিস্ফোরকগুলি ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে অবস্থিত বিপ্লববিরোধী গোষ্ঠীগুলির সহায়তায় একটি বিদেশী নিরাপত্তা পরিষেবার নির্দেশে ইরানে স্থানান্তর করা হয়েছিল।’
ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচীর কেন্দ্রস্থল নাতাঞ্জসহ ইস্পাহান প্রদেশে বেশ কিছু পারমাণবিক স্থাপনা অবস্থিত, যেগুলোতে নাশতকার করার জন্য ২০২১ সালে ইসরায়েলের ওপর অভিযোগ এনেছিল ইরান। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইরানের সামরিক, পারমাণবিক এবং শিল্প স্থাপনাগুলির আশেপাশে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ এবং আগুনের ঘটনা ঘটেছে৷