খবর৭১ঃ
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা, দেশে জ্বালানি তেলের দামের সমন্বয় এবং ডলারের দাম বাড়ায় রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে দেশের মূল্যস্ফীতি। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। এর প্রভাব পড়বে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হিসাবে।
আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে এই রেকর্ড হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ বা দুই অঙ্কের ঘরে এখনো যায়নি বলে জানা গেছে। সরকারি নীতিনির্ধারকরাও শিকার করছেন আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই বাড়বে। বর্তমানে এই হার অনেক বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন ছাড়া এসব তথ্য প্রকাশ করছে না পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
এদিকে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় কমে গেছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। নাভিশ্বাস উঠেছে নিু ও মধ্যম আয়ের মানুষের। বাজারে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। পরিবহণ খরচসহ জীবনযাত্রার সার্বিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই শ্রেণির মানুষ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন এখনো মূল্যস্ফীতির হিসাব চূড়ান্ত হয়নি। আরও দু-চার দিন সময় লাগবে। এর আগে তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের সর্বোচ্চ অথরিটি। তার অনুমোদন ছাড়া এই তথ্য প্রকাশ করা যায় না। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে এমএ মান্নান বলেন, আগস্টে দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সেটি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে। তবে অক্টেবরে কমতে শুরু করবে। কেননা রোপা আমনসহ বোরো ধান উঠতে শুরু করবে। আমাদের চালের মজুত আছে। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে।
আশা করছি, আরও সমন্বয় করা হবে। ফলে এসবের প্রভাবে কমবে মূল্যস্ফীতি। তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে না। এটা আন্তর্জাতিক বিষয়। কেননা এর আগে করোনা মহামারির কারণে অনেকটা চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল কিনছে সবাই। ইউক্রেনও কিছু কিছু পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে। পাশাপাশি প্রণোদনা প্যাকেজের মতো প্রধানমন্ত্রী দ্রুত কৃচ্ছ সাধন এবং আমদানি ব্যয় কমানোর ফলে ডলার ভয়ংকর রূপ ধারণ করেনি। ফলে মূল্যস্ফীতি অক্টোবরে কমে আসবে। সেটি পরবর্তী সময়ে অব্যাহত থাকবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি বাড়াটাই স্বাভাবিক। তবে তা দুই অঙ্কের নিচেই রয়েছে। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণেই এই অভিঘাত আমাদের ওপর আসছে। চালের ক্ষেত্রে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানির চেষ্টা চলছে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যদি আর খারাপের দিকে না যায়, তাহলে বোরো ধান ঘরে এলে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করবে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আমাদের নীতি সুদহার বাড়াতে হবে। এছাড়া রেমিট্যান্স হুন্ডির মাধ্যমে আসা বন্ধ করতে হবে। সরকারি চ্যানেলে রেমিট্যান্স এলে রিজার্ভ বাড়বে। তিনি জানান, অক্টোবর-নভেম্বরের আগে মূল্যস্ফীতি কমবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে কোনো তথ্য দেওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে গত জুনে রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যায় দেশের খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি। ওই মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। গ্রাম ও শহর সব জায়গায়ই খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়।