খবর ৭১: আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন আল কায়েদার নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি। প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন ২০১১ সালে নিহত হওয়ার পর সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটির জন্য এটি সবচেয়ে বড় আঘাত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, কয়েক বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন জাওয়াহিরি এবং তাকে খুঁজে বের করা এবং হত্যার ঘটনাটি কাউন্টার টেরোরিজম এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ‘সতর্ক ধৈর্যশীল এবং অটল’ কাজের ফল।
ওয়াশিংটনের ঘোষণার আগে পর্যন্ত জাওয়াহিরি পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকা অথবা আফগানিস্তানের ভেতরে অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন সময়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন ওই কর্মকর্তা জাওয়াহিরিকে হত্যার অভিযানের বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করেছেন…
গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার একটি নেটওয়ার্কের ব্যাপারে অবগত ছিল এবং তাদের মূল্যায়ন ছিল এই নেটওয়ার্ক জাওয়াহিরিকে আশ্রয় দিয়েছে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পর গত এক বছর ধরে মার্কিন কর্মকর্তারা দেশটিতে আল কায়েদার উপস্থিতির ইঙ্গিতগুলোর ওপর দৃষ্টি রাখছিলেন।
চলতি বছর মার্কিন কর্মকর্তারা জাওয়াহিরির পরিবার— তার স্ত্রী, মেয়ে এবং অন্য সন্তানদের কাবুলের একটি ‘সেফ হাউসে’ আশ্রয় নিয়েছেন বলে শনাক্ত করেন। পরবর্তীতে জাওয়াহিরিকেও একই স্থানে শনাক্ত করেন তারা।
কয়েক মাসের পর্যালোচনায় মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কাবুলের সেই ‘সেফ হাউসে’ জাওয়াহিরিকে সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পেরেছেন বলে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুর দিকে তারা মার্কিন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের এই ব্যাপারে জানাতে শুরু করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভ্যান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে তা জানান।
মার্কিন ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা অভিযান পরিচালনার জন্য একাধিক স্বাধীন উৎসের তথ্যের মাধ্যমে জীবনের (জাওয়াহিরির) একটি ছক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
জাওয়াহিরি একবার কাবুলের নিরাপদ সেই বাড়িতে পৌঁছালেও সেখান থেকে বের হয়েছেন কিনা সেসম্পর্কে কর্মকর্তারা জানতেন না। পরে তাকে বাড়ির বারান্দায় শনাক্ত করেন তারা। আর সেখানেই একাধিক চূড়ান্ত আঘাত হানা হয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
কর্মকর্তারা বাড়িটির নির্মাণ এবং অন্যান্য উপকরণের ব্যাপারে তদন্ত করেন। পাশাপাশি বাড়িটিতে অবস্থানরত জাওয়াহিরির পরিবার এবং অন্যান্য বেসামরিকদের জীবনের সর্বনিম্ন ঝুঁকি বিবেচনা করে কীভাবে নিখুঁতভাবে অভিযান পরিচালনা করা যায় তা পর্যালোচনা করেন।
এই ব্যাপারে সর্বোত্তম পদক্ষেপের মূল্যায়ন ও গোয়েন্দা তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনার জন্য সম্প্রতি প্রধান প্রধান সব উপদেষ্টা এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত ১ জুলাই হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম বার্নসসহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বাইডেনের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে প্রস্তাবিত অভিযানের রূপরেখা সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়।
এ সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন কর্মকর্তাদের কাছে বেশ কিছু প্রশ্ন করেন। কীভাবে তারা জাওয়াহিরির অবস্থানের ব্যাপারে জানলেন সেই প্রশ্নও করেন তিনি। পরে কাবুলের সেই সেফ হাউসের মডেল নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
মার্কিন ওই কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে বাড়িটির আলো, আবহাওয়া, নির্মাণ সামগ্রী এবং অন্যান্য উপকরণ— যা অভিযানের সফলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে; তা নিয়ে প্রশ্ন করেন বাইডেন। বৈঠকে কাবুলে হামলার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি বিশ্লেষণের জন্যও অনুরোধ জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তঃসংস্থার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের একটি দল গোয়েন্দা প্রতিবেদনের চুলচেরা বিশ্লেষণের পর নিশ্চিত করেন যে, আল কায়েদার নেতৃত্ব দিয়ে আসা জাওয়াহিরি একজন আইনসম্মত লক্ষ্যস্থল।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ২৫ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার মন্ত্রিসভার প্রধান সদস্য ও উপদেষ্টাদের নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হলে তালেবানের সাথে আমেরিকার সম্পর্কে কেমন প্রভাব পড়বে সেব্যাপারে আলোচনা করেন। সিচুয়েশন রুমের অন্যান্যদের কাছ থেকে মতামত নেওয়ার পর জো বাইডেন ‘একটি নিখুঁত উপযোগী বিমান হামলার’ অনুমোদন দেন। তবে এতে তিনি শর্ত জুড়ে দেন যে, এই হামলায় বেসামরিক হতাহতের ঝুঁকি সর্বনিম্ন রাখতে হবে।
রোববার কাবুলের স্থানীয় সময় সকাল ৬ টা ১৮ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্র্রের একটি ড্রোন থেকে তথাকথিত ‘হেলফায়ার বা নরকের গোলা’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আয়মান আল জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হয়।
সূত্র: রয়টার্স।