উজ্জ্বল রায়, নড়াইল থেকে :নড়াইলে বাঙ্গির ফলনে ছাড়িয়ে কৃষকদের মুখে হাসি।নড়াইলের লোহাগড়ায় কোলা গ্রামের বাঙ্গিখেতে চাষি বিল্লাল।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় এবার বাঙ্গির ভালো ফলন হয়েছে। এ ফলন গতবারের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। অল্প বীজে ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকেরা বাঙ্গি উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার দক্ষিণাঞ্চল বলে পরিচিতি কোলা, পারমল্লিকপুর, নোয়াপাড়া, বয়রা, দিঘলিয়া, মঙ্গলহাটা, কালনা, কামঠানা ও তালবাড়িয়া এলাকায় এবার বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। বাঙ্গি চাষ করে অনেক পরিবার সচ্ছল হয়ে উঠেছে।
কথা হয় উপজেলার কোলা গ্রামের বাঙ্গি চাষি মো. বিল্লাল হোসেইনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক একর জমিতে বাঙ্গির চাষ করেছি। ফলন খুব ভালো। আমি নিজেই বাজারে খুচরা বিক্রি করছি। প্রতিদিন ৫-৬ হাজার টাকার বাঙ্গি হচ্ছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকেরা প্রতিদিন ১ টন বাঙ্গি জমি থেকে সংগ্রহ করছেন। বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা জমি থেকে এই বাঙ্গি সংগ্রহ করে দেশের বড় বড় বিভাগীয় শহরে নিয়ে বিক্রি করছেন।
উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের বাঙ্গি চাষি মুরাদ হোসেন বলেন, আমাদের এই বাঙ্গি উপজেলার লোহাগড়া বাজার, দিঘলিয়া বাজার, এড়েন্দা বাজার, শিয়রবর বাজার, মানিকগঞ্জ বাজার, লাহুড়িয়া বাজারে বিক্রি করার পরও আমাদের এই বাঙ্গি যশোর, খুলনা, ঢাকা, বরিশাল, মোল্যারহাটসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন আকারের বাঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে। আকার অনুযায়ী প্রতিটি বাঙ্গির দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে দুইরকমের বাঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে যার মধ্যে বেলে ও আঠালে জাতীয় বাঙ্গি। আঠালে বাঙ্গি খেতে মজা। আঠালে বাঙ্গি তরকারী হিসাবে খাওয়া যায় বলে এক ক্রেতা জানান। বাঙ্গি চাষ সম্পর্কে মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক মো. রাসেল মোল্যা জানান, সাধারণত মাঘ মাসে বাঙ্গির বীজ লাগানো হয়। এক একর জমিতে এক মন টিএসপি, এমপি ইউরিয়া সার দিতে হয়। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে বাঙ্গি খাওয়ার উপযুক্ত হয় বলে তিনি জানান।
লোহাগড়া বাজারের বাঙ্গি ব্যবসায়ী বোরহান, সুমন, বিপ্লব বলেন, এক শত বাঙ্গি পাঁচ হাজার টাকায় কিনে ৭- ৮ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। এই বাঙ্গি একদিকে যেমন কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে, তেমনই বেকার যুবকের বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করেছে। তবে উপজেলায় বাঙ্গির কোনো আড়ত না থাকায় অবিক্রীত বাঙ্গি পচে যায় বলে একাধিক বিক্রেতা জানান।
মঙ্গলহাটা গ্রামের কৃষক মতি মিয়া বলেন, এ উপজেলা বাঙ্গির জন্য কোনো হিমাগার থাকলে আমাদের মতো গরিব চাষিদের আর দুঃখ থাকত না। অনেক সময় অবিক্রীত বাঙ্গি বাড়ির গরু-ছাগলকে খাওয়াতে হয় বলে তিনি জানান।
লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রইচ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের মাটি আবহাওয়া বাঙ্গি চাষের উপযোগী বিধায় ফলন খুব ভালো হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দেই যাতে ফলন বেশি হয়।’