খবর৭১ঃ
শনিবার রাত ৩টা। মানুষে ঠাসা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কাউন্টার চত্বর। সেখান থেকে সড়কে ঠেকেছে টিকিট প্রত্যাশীদের লাইন। গোটা এলাকা লোকে লোকারণ্য। অধিকাংশ লোক সেহরি খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সঙ্গে আনা খাবার ভাগাভাগি করে খাচ্ছিলেন তারা। সংশ্লিষ্টরা জানালেন, মধ্যরাত থেকে শুরু করে সারা দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও অধিকাংশের কপালে জুটছে না ট্রেনের টিকিট। এ যেন ‘সোনার হরিণে’ পরিণত হয়েছে। কারণ, শুধু সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলের জন্য আন্তঃনগর (আটটি ট্রেন) ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে কমলাপুর থেকে। একেকটি ট্রেনে গড়ে ৭০০ টিকিট হলে, সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬০০টিতে। এর মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ ২৮০০ টিকিট কাউন্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে (রোববারের)। লাইনে দাঁড়ানো ৯৫ শতাংশ লোকই গড়ে চারটি করে টিকিট কাটেন। সেই হিসাবে মাত্র ৭০০ লোক টিকিট পাওয়ার কথা। কিন্তু, রাত ৩টায় স্টেশনে লোকের সংখ্যা ছিল ১২ থেকে ১৫ হাজার। তা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ থেকে ৩০ হাজারে।
শনিবার রাতে ও রোববার সকালে সরেজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। এদিনে (রোববার) ২৮ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়। আজ ২৯ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে। আরও জানা গেল, এবার ঈদযাত্রায় ট্রেনের ওপর চাপ পড়বে ভয়াবহ। গত দু’বছর ঈদযাত্রায় যারা ট্রেনে চড়েনি, এবার তারা পণ করে বসেছে। হাতে টিকিট আসুক, না আসুক-প্রয়োজনে ট্রেনে ঝুলে বাড়ি ফিরবেন। আসন সংখ্যার প্রায় শতগুণ বেশি যাত্রী স্টেশনে আসছেন টিকিটের আসায়। অধিকাংশই টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য-কোনো ঈদেই বিনা টিকিটি রোধ করা সম্ভব হয় না। ট্রেনের ছাদ, ইঞ্জিনের দু’পাশ, দু’বগির সংযোগস্থলসহ দরজা-জানালায় ঝুলে বাড়ি ফেরে যাত্রীরা। এছাড়া ধর্মীয় অনুষ্ঠান সামনে রেখে বিনা টিকিটে ওঠা যাত্রীদের জোর করে ট্রেন থেকে নামানোও সম্ভব হয় না। বিভিন্ন কৌশলে যাত্রীরা ট্রেনে উঠে পড়ে।
শনিবার ৩টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, শত শত লোক স্টেশন কাউন্টার, চত্বর ঘিরে লাইন করে বসে আছেন, কেউ আবার ঘুমিয়ে আছেন। কথা হয় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সরওয়ারের সঙ্গে। তিনি জানালেন, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চল আন্তঃনগর (আটটি ট্রেন) ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ২৭ ও ২৮ এপ্রিল রাজধানীর কমলাপুরসহ বাকি চারটি স্টেশনে মোট টিকিটের অর্ধেক ১৩ হাজার ৩৫৬টি কাউন্টারে বিক্রি হচ্ছে। ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত দুটি স্পেশাল ট্রেনের টিকিট যুক্ত (৭০০ টিকিট) হয়ে ১৪ হাজার ৫৬টি হবে।