শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল প্রতিনিধি : বেনাপোল বন্দরে আবারো আগুন লেগে পুড়ে ভষ্মিভূত হয়েগেছে ব্লিচিং পাউডারবাহী ৬টি ভারতীয় ট্রাক। এসময় আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়েগেছে আমদানিকৃত অনেক মটর পাটস ও মেশিনারীজ যন্ত্রাংশ।
শুক্রবার(১৫ এপ্রিল) ভোর ৫ টা ৪ মিনিটের সময় বেনাপোল বন্দরের টিটিআই টার্মিনালে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট ও স্থানীয়দের প্রচেষ্টার দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ নিয়ে গত ১০ বছরে ৫ থেকে ৬ বার বেনাপোল বন্দরে আগুণ লেগে হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়ে ভষ্ম হওয়ায় সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসেছেন অনেক আমদানিকারক। বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের দ্বায়িত্বে অবহেলা অব্যবস্থাপনা খামখেয়ালীপনা জায়গা সংকট ও পণ্য চুরি আড়াল করতে বারংবার এ বন্দরে আগুণ লাগার ঘটনা ঘটে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্থ আমদানিকারকদের।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বন্দরের সিকিউরিটি গার্ডরা জানান, সেহরি শেষে ফজরের নামাজের পর মানুষ যখন নিদ্রাচ্ছন্ন হচ্ছিল ঠিক সেসময়ে বোমা বিস্ফোরনের ন্যায় বেনাপোল বন্দর অভ্যন্তর থেকে অগ্নিদগ্ধ ভারতীয় ট্রাকে থাকা ব্লিচিং পাউডারের ড্রাম ফেটে বিকট শব্দ বের হচ্ছিল। পরে স্থানীয়রা ছুটে এসে আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে জ¦লে উঠতে দেখে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। এসময় বেনাপোল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। পরে ঝিকরগাছা ফায়ার সার্ভিস ও যশোর ফায়ার সাভিসের কর্মীরা আসলে ৩টি ইউনিট মিলে দীর্ঘ ৩ ঘন্টা পর বে-পরোয়া আগুণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। তবে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল বন্দরের পানির লাইন ও ফায়ার সার্ভিসের সকল যন্ত্রাংশ এবং কার্যক্ষমতা অচল থাকায় হতাশা প্রকাশ ও আক্ষেপ করেছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
বলেন, বন্দরের পানির লাইনে পানি ছিলোনা। যা আগুন লাগার ঘটনায় চিরাচরিত নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী মোস্তফিজ্জোহা সেলিম জানান, বন্দরের অব্যবস্থাপনায় বারবার এভাবে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হলেও বন্দরের কোন দায়ভার নেই। এ নিয়ে গত ১০ বছরে বেনাপোল বন্দরে ৫ থেকে ৬ বার বড় ধরনের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়ে অনেক আমদানিকারক পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন্দরের কতিপয় কর্মকর্তা ও আমদানিকারক প্রতিনিধিরা জানান, ব্লিচিং পাউডার খুবই দাহ্য পণ্য হওয়ায় একটু গরম পড়লে তা ঘেমে আগুণ ধরে, আবার পানি পাইলেও ভিজে আগুণ ধরে। সেজন্য নিয়ম মাফিক ফাঁকা জায়গায় রাখতে হয়। সেখানে বন্দরের স্থান সংকুলান হওয়ায় টিটিআই মাঠে অন্যান্য পণ্যের সাথেই ব্লিচিং পাউডারবাহী ভারতীয় ট্রাকগুলো রাখা হয়েছিলো। সেসাথে লম্বা ছুটিতে অধিকাংশ কর্মকর্তারা বাহিরে থাকায় এবং ট্রাক ড্রাইভাররা ভারতে চলে যাওয়ায় দেখভালের অভাবে অতিরিক্ত গরম থেকে ঘেমে এ আগুণের সুত্রপাত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
বেনাপোল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অফিসার ইনচার্জ রতন কুমার দেবনাথ জানান, ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিটের প্র”েষ্টায় দীর্ঘ ৩ ঘন্টা পর আগুণ নিয়ন্ত্রণে আসে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, এর আগেও কয়েকবার ব্লিচিং পাউডার থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনার প্রকৃত কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। তদন্ত স্বাপেক্ষে বলা যাবে বলে জানান তিনি।