খবর৭১ঃ সন্তানের সঙ্গে বাবা-মাকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। সন্তানের চাওয়া-পাওয়ার মূল্য দিতে হবে। কোনো বিষয়ে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের সঙ্গে জোরজবরদস্তি করা যাবে না।
১৯ বছর বয়সী কানাডিয়ান তরুণীকে গৃহবন্দি রাখার অভিযোগের রিটের শুনানিতে রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালত ১৯ বছরের তরুণীর বাবা-মাকে উদ্দেশ করে বলেন, তাকে ফ্রিডম দিতে হবে। সে কানাডায় যেতে চায়, সেখানে পড়তে চায়। বাবা-মাকে সেই সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। দুয়ার বন্ধ রাখা চলবে না।
পরে আদালত ১৯ বছরের কানাডিয়ান ওই তরুণীর ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ এবং তাকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সুযোগ দিতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই তরুণী বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকবেন বলে আদেশে বলা হয়। এছাড়া এই রিট মামলায় কানাডিয়ান হাইকমিশনকে পক্ষভুক্ত করতে বলা হয়। এই রিট মামলা মঙ্গলবার কার্যতালিকায় থাকবে।
এর আগে খাস কামরায় ১৯ বছরের তরুণীর কথা শোনেন বেঞ্চের দুই বিচারপতি। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তরুণীর বাবা-মায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. ওজিউল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া কানাডিয়ান হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে বাবা-মায়ের বাসায় গৃহবন্দি থাকা ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীকে হাজির করতে ৫ এপ্রিল নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মুগদা থানার পুলিশ ও তার বাবা-মাকে তরুণীকে হাজির করতে বলা হয়। একইসঙ্গে তরুণীর অসম্মতিতে তাকে ১০ মাস ধরে আটক রাখা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
রিটের নথি থেকে জানা যায়, ১৯ বছরের ওই তরুণীর জন্ম কানাডায়। তিনি জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক। কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তার বাবা-মাও কানাডায় থাকতেন। ১০ মাস আগে তার বাবা-মা বেড়ানোর কথা বলে তাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেওয়া হয়নি।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে তার নানি ও মা সব সময় বাসায় বন্দি করে রাখেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ডফোনে কানাডা সরকার ও ঢাকায় কানাডিয়ান হাইকমিশনকে তাকে জোরপূর্বক ঘরবন্দি করে রাখার কথা জানান। ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদা থানায় কানাডিয়ান হাইকমিশন থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়। তারপর হাইকমিশনের পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র হাইকোর্টে রিট করে। রিটে পুলিশের আইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, মুগদা থানার ওসি, ওই তরুণীর বাবা-মাকে বিবাদী করা হয়।