খবর৭১ঃ মানুষের ঘুমের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়াকে বলা হয় ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’। চিকিৎসকরা এই রোগকে নীরব ঘাতক বলে থাকেন। এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ঘুমের মধ্যেই অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে নারীদের চেয়ে স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধের হার পুরুষদের বেশি।
রোববার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এ ব্লকের মিলনায়তনে নীরব ঘাতক রোগ ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বিষয়ক শীর্ষক সেন্ট্রাল সেমিনার এই তথ্য জানানো হয়। সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সেমিনারে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা ২ ভাগ নারী ও ৪ ভাগ পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে শহুরে জনসংখ্যার শতকরা পুরুষ ৪ দশমিক ৪৯ ভাগ ও নারীরা ২ দশমিক ১৪ ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’ রোগে আক্রান্ত।
সেমিনারে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যাদের নাক ডাকার সমস্যা, যাদের ঠিকমতো ঘুম হয় না, যাদের শরীর স্থূলাকার- তারা এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। এ রোগের চিকিৎসা রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে কোনো কোনো রোগীর সার্জারির প্রয়োজন হয়।’
তিনি বলেন, স্লিপ অ্যাপনিয়া বিষয়ে অনেকে জানে না। তাদের এ রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রোগের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা হয়। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন এ উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, স্লিপ অ্যাপনিয়া সারা বিশ্বের একটি অবহেলিত ঘাতক ব্যাধি। তবে এখনো স্লিপ অ্যাপনিয়ায় শতকরা ৯০ শতাংশ রোগী চিকিৎসার আওতার বাইরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন এ রোগের চিকিৎসা রয়েছে। দেশে এই রোগ সম্পর্কে চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে আরও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। বিএসএমএমইউতে দুটি স্লিপ ল্যাব রয়েছে। গত পাঁচ বছর এখান থেকে স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকদের উদ্দেশে অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, স্লিপ অ্যাপনিয়ার সচেতনতার লক্ষ্যে প্রত্যেক চিকিৎসককে সচেতন হতে হবে। সচেতনতার জন্য প্রত্যেক চিকিৎসকের উচিত রোগীর হিস্ট্রি নিতে হবে। কম করে হলেও মাত্র ত্রিশ সেকেন্ড সময় বেশি ব্যয় করে চিকিৎসকদের উচিত রোগীর ঘুমের হিস্ট্রি নেওয়া। এ রোগের ফলে মানুষের রেসপিরটারি, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক ফেইলিউরের মতো জটিল রোগ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন। সেমিনারে স্পিকার হিসেবে আরও বক্তব্য দেন- নাক কান গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান তরফদার।
সেমিনারে রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলামের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। সেমিনারে বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক ও চিকিৎসকরা অংশ নেন।