স্টাফ রিপোটার,বাগেরহাট:বাগেরহাট জেলার হাট-বাজারে সরকারি রেটের কয়েকশ’গুন খাজনা আদায় করছেন ইজারাদাররা। ইজারাদারের চাপের মুখে ক্রেতা-বিক্রেতারা বাধ্য হচ্ছেন অতিরিক্ত খাজনা দিতে। এর ফলে ভোক্তা পর্যায়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া সরকারি খাজনার (টোল) রেট হাট-বাজারের প্রকাশ্যে টানানোর কথা থাকলেও জেলার হাট-বাজারে তা থাকার কারনে জেলার ১৫৪টি হাটেই একই ভাবে বেশি খাজনা আদায় করা হচ্ছে। একই পন্যের বারবার খাজনা আদায়ের ঘটনাও রয়েছে। যার ফলে ভোক্তা পর্যায়ে পন্যের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি দোকানী ও ক্রাতাদের। এবিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা দায়িত্ব পালন না করায় ফলে ইজাজারাদার ও খাজনা আদায়কারীরা ইচ্ছেমত শোষন করছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
বাগেরহাটের বাধাল, কচুয়া, যাত্রাপুর, দৈবজ্ঞহাটী, পোলেরহাট, চুলকাঠি, গজালিয়া তালেশ^র, চটেরহাটসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে গিয়ে দেখা যায় সরকারি টোল নির্ধারণ করা কোন রেট চার্ট নেই সেখানে। ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পন্য বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানাযায় সরকারি রেট সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই। খাজনা আদায়কারীরা যে পরিমান টাকা চায়, সেই টাকাই দিতে হয় তাদের।
ইজারাদাররা হাট-বাজারের কাঁচামাল-সবজি খুচড়া বিক্রেতাদের কাছ থেকে চটি প্রতি ৬ টাকার স্থলে নিচ্ছে ১২০ থেকে ২০০ টাকা, মাছের দোকান থেকে ৩ টাকার স্থলে ১২০ টাকা, মাংসের দোকানে ১০ টাকার স্থলে ৩০০ টাকা, হাঁস-মুরগী- কবুতর প্রতি নিচ্ছে ২ টাকার স্থলে ৭ টাকা, মুদি দোকান থেকে ৩ টাকার স্থলে ৬০ টাকা, তরমুজের দোকান থেকে ৫ টাকার স্থলে নিচ্ছে ৩০০ টাকা, কাপড়ের চটি থেকে ৪ টাকার স্থলে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গুড়ের চটিতে ৩ টাকার স্থলে ৪০ টাকা, ধানে প্রতি আড়াই মনে ৪ টাকার স্থলে নিচ্ছে ১২৫ থেকে ২৫০ টাকা, চাউর আটায় প্রতি আড়াই মনে ৬ টাকার স্থলে নিচ্ছে ১২৫ টাকা, প্রতি বস্তা শুকনা শুপারীতে ৫ টাকার স্থলে ১২০ টাকা, চাটাই ও বাশের তৈরি ঝুড়ি-ঝাকার দোকান থেকে ৫ টাকার স্থলে ৩০০ টাকা, প্রতিটি গরু ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা, ছাগল বিক্রির উপর শতকরা ৯ টাকা, পানের দোকানে ৩ টাকার স্থলে খাজনা আদায় করা হচ্ছে ২০০ টাকা। এরবাইরে পাইকারি ক্রয়-বিক্রয়েও প্রতিহাটে বিপুল পরিমান াতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। সরকারি রেটের অতিরিক্ত এত বেশি খাজনা আদায় করলেও যেন দেখার কেউ নেই।
বাধাল বাজারে নিয়মিত কাঁচামাল ব্যবসায়ী রাজিব তালুকদার বলেন, ৩-৪ হাত জায়গায় ছালার চট বিছিয়ে বসলেই ১২০ টাকা দিতে হয়। অনেক সময় দুইশ টাকাও দিতে হয়। আর না দিলে আমাদেরকে বসতে দেয়া হয় না। জাহিদুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, শুনেছি হাটে খাজনা দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি রেট রয়েছে। কিন্তু আমরা কোনদিন সরকারি রেট সম্পর্কে জানিনা, দেখিওনি। জানতে চাইলে অনেক খারাপ ব্যবহার করে ইজারাদারের লোকেরা। যাত্রাপুর বাজারের অজিৎ বিশ^াস নামে ব্যবসায়ী বলেন, সরকারি হাট-বাজার গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দলীয় নেতাকর্মীরা ইজারা নেয়। যার ফলে তারা তাদের ইচ্ছে মত জোরজবদস্তি করে খাজনা আদায় করে। সেক্ষেত্রে আমাদের মত সাধারণ ব্যবসায়ীরা সরকারি রেট দেখার কথা বললে মার খেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসাও বন্ধ করে দিতে হয় আমাদের।
বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি নীহার রঞ্জন সাহা বলেন, হাট-বাজারে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের ফলে ভোক্তা পর্যায়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম বেড়ে যায়। এ বিষয়ে সরকারি কোন তদারকিও নেই। গত ১৩ মার্চের জেলা আইনশৃঙ্খলা কিমিটর সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অতিদ্রুত প্রতিটি হাটে সরকার নির্ধারিত রেট টানিয়ে দিয়ে সহনীয় পর্যায়ের খাজনা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
কচুয়ার রাঢ়িপাড়া ইউটি চেয়ারম্যান বাধাল বাজার ইজারা গ্রহনকারী নাজমা আক্তারের পক্ষে খাজনা আদায়কারী সরোয়ার হোসেন বলেন, অনেক ক্ষেত্রে সরকারি রেটের থেকে কম নেই আমরা। আবার কিছু ক্ষেত্রে বেশিও নেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা অনেক সময় মিথ্যা কথাও বলে আমাদের নামে। সরকার নির্ধারিত খাজনার রেট প্রকাশ্য স্থানে প্রদর্শণের বিষয়ে সরোয়ার হোসেন বলেন, এটা ইজারাদাররা টানায় না, এটা প্রশাসনের টানানোর কথা।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করা হয়েছে। সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কঠোর তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সরকার নির্ধারিত রেট চার্ট প্রকাশ্য স্থানে টানানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।