মোংলায় ফারুকের তৈরি প্ল্যান্টে ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন

0
350

স্টাফ রিপোটার,বাগেরহাট: নদীর ঢেউ কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাগেরহাটের মোংলার শেলা বুনিয়া গ্রামের ওমর ফারুক। দুই বছর গবেষণার পর পরীক্ষামূলক একটা প্রোটোটাইপ ওয়েভ প্রজেক্ট করেছেন, যার নাম দিয়েছেন ‘বঙ্গোপ ওয়েভ ফ্রেস এনার্জি’। মেশিনটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে।
ওমর ফারুকের দাবি, এই প্রকল্পটি যদি বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে জ্বালানি ছাড়াই স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরবরাহ সম্ভব হবে।

শেলাবুনিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক সালাম শেখ বলেন, ওমর ফারুক খুবই মেধাবী। তার বাবা ইউনুস আলী মারা যাওয়ার পর ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারেননি। তবে ছোটবেলা বেলা থেকেই লক্ষ্য করেছি, বিদ্যুৎ নিয়ে ওমর ফারুকের আগ্রহ রয়েছে। দীর্ঘদিন চেষ্টার ফলে একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন, যা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছেন। সরকারের কাছে দাজি জানাই, ওমর ফারুককে স্বীকৃতি দিয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হক।
ওমর ফারুকের প্রতিবেশী হাফিজুর রহমান বলেন, অনেক দিন ধরে কাজ করে মেশিনটি তৈরি করেছেন ওমর ফারুক। আমি দেখেছি, নদীর ঢেউয়ের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক লাইট জ্বলতে। বড় পরিসরে কাজটি করার জন্য সরকারিভাবে তাকে যদি সহায়তা করা হয়, তাহলে আরও ভালো কিছু দেখাতে পারবেন।
ওমর ফারুক বলেন, ছোটবেলা থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে আগ্রহ ছিল। এই আগ্রহ থেকেই ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর ডিপ্লোমার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। তবে স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্ক্ষা ছিল। এ কারণেই বিভিন্ন বৈদ্যুতিক পাওয়ার প্ল্যান্টে চাকরির পাশাপাশি অনলাইনে পাওয়ার প্ল্যান কোর্সে পড়াশোনা করছেন। সমুদ্রের ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ তৈরি সংক্রান্ত বিভিন্ন দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো দেখে প্রায় দুই বছরের চেষ্টায় পরীক্ষার জন্য এই প্রোটোটাইপ তৈরি করেছেন। এটা নির্মাণে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, এটা ব্যয়বহুল মনে হলেও মূলত তা নয়। আমাদের দেশে যে কয়টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে, তা অনেক ব্যয়বহুল। কারণ এগুলো পরিচালনা করতে জ্বালানির প্রয়োজন। সেই দিক বিবেচনা করলে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু নির্মাণব্যয় হিসাব করে বছরের পর বছর ধরে কোনও ধরনের জ্বালানি ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। ‘আমার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকার যদি মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তাহলে সাধারণ মানুষ অনেক কম খরচে বিদ্যুৎ পাবে। এছাড়া এই প্লান্টে কোনও কার্বন তৈরি হয় না। তাই প্রকৃতির কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। এটা সি লাইফের ওপর লক্ষ্য রেখে ডিজাইন করা, ফলে সামুদ্রিক কোনও প্রাণীর ক্ষতি হবে না।’

বাগেরহাট ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, ওমর ফারুক সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন, সেটাকে বলা হয় ‘টাইডাল পাওয়ার’ প্রযুক্তি। এটা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নতুন সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। আমাদের দেশেও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here