ফার্মের মুরগিতে উচ্চমাত্রায় ক্ষতিকর পাঁচ ভারী ধাতু

0
377

খবর৭১ঃ দেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা ফার্মের মুরগির মাংসে উচ্চমাত্রায় ক্ষতিকর পাঁচটি ভারী ধাতুর উপস্থিতি মিলেছে। এসব ধাতু হলো- আর্সেনিক, নিকেল, ক্রোমিয়াম, পারদ ও সিসা। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, এসব ক্ষতিকর ধাতু খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করলে মানবদেহে তাৎক্ষণিক কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হলেও দীর্ঘদিন ধরে এগুলো শরীরে প্রবেশ করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায় ২৫ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য রোগের ঝুঁকি থাকে ৪২ শতাংশ।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ‘প্রবাবিলিটিস অব হেলথ রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট অব টক্সিক মেটালস ইন চিকেনস ফ্রম দ্য লারজেস্ট প্রডাকশন এরিয়া অব ঢাকা’।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের কারিগরি সহায়তায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন গবেষকের করা ওই গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, খামারে উৎপাদন করা মুরগির মাংসে মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে ১০৪ গুণ আর্সেনিক, ৫.৫৮ গুণ নিকেল, ৩ গুণ ক্রোমিয়াম, ২.৮ গুণ পারদ ও ৪.৬ গুণ সিসা রয়েছে।

নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চ জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা জেলার সাভারের ১২টি বাণিজ্যিক খামার থেকে মুরগির নমুনা সংগ্রহ করে এ গবেষণা পরিচালিত হয়।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, যেসব খামার থেকে মুরগির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, সেগুলোতে ব্যবহার করা পোলট্রি ফিডের নমুনায়ও ক্ষতিকর মাত্রায় আর্সেনিক, নিকেল, পারদ ও সিসা পাওয়া গেছে। একইভাবে মুরগির পানীয় জলেও দূষণ পেয়েছে গবেষক দল। পানিতে অন্যান্য দূষণের পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকও পাওয়া যায়।

এসব ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি মানবদেহে ক্যানসার ও অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

গবেষকরা বলেছেন, বাজারে বিক্রির ৭২ ঘণ্টা আগে কোনো মুরগির শরীরে হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলে তা খাওয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এর পরও কোনো কোনো খামারি অতি মুনাফার লোভে পোলট্রি মুরগির ওজন বাড়াতে হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেন।

গবেষণাটির তত্ত্বাবধানে থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শফি মোহাম্মদ তারেক বলেন, মানসম্মত নয় এমন ফিডের মাধ্যমেই এসব ধাতু মুরগির শরীরে ঢুকছে।

তিনি বলেন, ফিডের মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নজরদারির অভাবের কারণে দেশে মান সম্মত ফিডের উৎপাদনের ঘাটতি রয়েছে। ফিডগুলো তৈরি, মোড়ক জাত ও বাজারজাত করার ক্ষেত্রে শতভাগ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলোতে ধাতুর উপস্থিতি রয়ে যায় যা দিন শেষে মুরগির শরীরে প্রবেশ করে। এছাড়া পোলট্রি মুরগির জন্য যে সকল উৎস থেকে পানি ব্যাবহার করা হয় তা যথাযথ পরীক্ষা ব্যতিরেকে ব্যবহার করার কারণেও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন ধাতব এবং অন্যান্য বস্তু মুরগির শরীরে ঢুকছে।

অধ্যাপক ড. শফি মোহাম্মদ তারেক বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে না এমন মুরগি উৎপাদনের জন্য খামারিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে খামার এবং ফিড উৎপাদনকারী শিল্প সমুহকে নজরদারির আওতায় আনতে হবে।

এটা করা সম্ভব হলে আগামী ৪/৫ বছরের মধ্যে দেশে শতভাগ না হলেও ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ স্বাস্থ্যসম্মত পোলট্রি মুরগি উৎপাদন সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here