শেষ বলে হেরে হোয়াইট ওয়াশ বাংলাদেশ

0
502

খবর৭১ঃ শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ৮ রানে। বিকল্প বোলার না থাকায় অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ নিজেই বল হাতে তুলে নেন। প্রথম বল ডট দেওয়ার পর দ্বিতীয় বলে ফেরান সরফরাজ আহমেদকে। পেণ্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচ তখন বাংলাদেশের দিকে হেলে। পরে হায়দার আলী, ইফতেখার আহমেদকে ফিরিয়ে মরা ম্যাচে প্রাণ ফেরান মাহমুদউল্লাহ। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ বলে ৪ খেয়ে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ দল।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের লক্ষ্য কী? সম্প্রতি নানান কাণ্ডে আর বির্তকিত ঘটনায় জর্জরিত বাংলাদেশ দল মাঠের বাইরে যেমন টালমাটাল, তেমনি খেই হারিয়েছে বাইশ গজে। বিশ্রামের আড়ালে বাদ পড়ছেন দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা। এর পিছনে ছায়া হয়ে ছিল অধারাবাহিক পারফরম্যান্স। একাধিক তরুণ ক্রিকেটারকে সুযোগ দেওয়া, ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন। এ ম্যাচের শেষের রোমাঞ্চটুকু বাদ দিলে আখেরে লাভ হচ্ছে না কিছুই।

ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা একেবারে নির্লিপ্ত। যেন ম্যাচ জয় নয়, হারতে বা অংশগ্রহণ করতে মাঠে নামছে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর আজ (সোমবার) তৃতীয় ও শেষ ম্যাচেও হার লাল-সবুজের দলের। মিরপুরে এ ম্যাচে আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ১২৪ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ দল। ছোট লক্ষ্য টপকাতে বেগ পেতে হয়নি পাকিস্তানকে। ৫ উইকেট হাতে রেখে টানা তিন জয়ে ধবলধোলাই করল তারা।

এমন ব্যর্থতায় দায় অবশ্য কম নয় টিম ম্যানেজমেন্টের। শেষ ম্যাচের আগে তড়িঘড়ি করে উড়িয়ে আনা হলো পারভেজ হোসেন ইমন আর কামরুল ইসলাম রাব্বিকে, অথচ আগের দুই ম্যাচ হেরে ধবলধোলাইয়ের শঙ্কায় থাকা স্বাগতিকরা এ ম্যাচে সুযোগ দেয়নি এই দুই ক্রিকেটারকে। ইয়াসির আলী রাব্বিকে কেন আবারও উপেক্ষিত করা হলো এনিয়ে প্রশ্নের পাহাড় জমেছে। কিন্তু উত্তর নেই কোন।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ঘরের মাঠে এর আগে সবশেষ সাড়ে ৩ বছর আগে ধবলধোলাইয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছিল ০-২ ব্যবধানে। যদিও এরপর বিদেশের মাটিতে আরও ৩ বার এমন স্বাদ পেতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে।

এদিন আগে ব্যাট করে নাঈম শেখের ৪৭ রানের উপর ভর করে স্কোর বোর্ডে ১২৪ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ দল। ১২৫ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে ওপেনার বাবর আজম এ ম্যাচেও সুবিধা করতে পারেননি। পাকিস্তানি অধিনায়ককে ১৯ রানে আউট করেন লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম। বাবর আউট হলে ভাঙে মোহাম্মদ রিজওয়ানের সাথে ৩২ রানের উদ্বোধনী জুটি।

এরপর ৩ নম্বরে নামা হায়দার আলীকে নিয়ে দলকে সহজ জয়ের পথেই রাখেন রিজওয়ান। ৪৮ বলে গড়েন জুটির ফিফটি। রিজওয়ান নিজেও হাঁটছিলেন অর্ধশতকের দিকে, তবে অভিষেক হওয়া পেসার শহিদুল ইসলাম দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে রিজওয়ানকে বোল্ড করেন। এই ওপেনার ফেরেন ৪৩ বলে ৪০ রান করে। পরে এই সিরিজের প্রথমবারের মতো একদশে সুযোগ পাওয়া সরফরাজ আহমেদকে নিয়ে লড়াই চালান হায়দার আলী।

শেষদিকে পাকিস্তান শিবিরে চাপ তৈরি করেছিলেন স্বাগতিক বোলাররা। শেষ ২ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন পড়ে ১৫ রান। ১৯তম ওভারে শহিদুল ৭ রান দিলে শেষ ওভারে ৮ রান দরকার হয়। তবে হাতে বিকল্প বোলার না থাকায় অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ নিজেই বল হাতে তুলে নেন। প্রথম বল ডট দেওয়ার পর দ্বিতীয় বলে ফেরান সারফরাজ আহমেদকে। পেণ্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচ তখন বাংলাদেশের দিকে।

ওভারের তৃতীয় বলে হায়দার আলীকে আউট করে সব যেন গোটা স্টেডিয়ামে গর্জনের ঢেউ তলেন টাইগার দলপতি। তবে চতুর্থ বলে উইকেটে এসে বিশাল এক ছক্কা হাকিয়ে সেই গর্জন স্তব্ধ করে দেন ইফতেখার আহমেদ। কিছু চমক যেন জমিয়ে রেখেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। পঞ্চম বলে ফেরান সেই ইফতেখারকে। নাটক তখনও বাকি, শেষ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ২ রান। তবে শেষ রক্ষা হলো না, শেষ বলে চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন মোহাম্মদ নেওয়াজ।

ইনিংসের শেষ বলে পাওয়া জয়ে ৫ উইকেট হাতে থাকে সফরকারী। এ ম্যাচ হারের মধ্য দিয়ে ৩ ম্যাচ সিরিজে ৩ ম্যাচ হার বাংলাদেশ দলের। টাইগারদের হয়ে ১ ওভার বল করে মাহমুদউল্লাহ ১০ রান দিয়ে নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ দলের ওপেনিং জুটিতে আরেক দফা পরিবর্তন এনেও ফায়দা হয়নি। সাইফ হাসানের ব্যর্থতায় নাঈম শেখের সাথে ইনিংস শুরু করা নাজমুল হোসেন শান্ত ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে অভিষিক্ত পাকিস্তানি পেসার শাহনেওয়াজ দাহানির বলে বোল্ড হন ৫ রান করে। একাদশে ফেরা শামীম হোসেন এদিন ৩ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন। লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিলেও থামেন ২৩ বলে ২২ রান করে।

শামীমের বিদায়ের পর খোলস ছেড়ে বেরোনোর চেষ্টা করেন এক প্রান্তে ধীর গতির ব্যাটিং করা নাঈম। নিজের খেলা প্রথম ২১ বলে ১০ রান করা এই ব্যাটার উসমান কাদিরের করা ইনিংসের ১০ম ওভারে হাঁকান একটি করে চার, ছক্কা। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন সিরিজ জুড়ে ইতিবাচক ব্যাটিং উপহার দেওয়া আফিফ হোসেন। ১২তম ওভারে উসমান কাদিরকে আফিফ হাঁকান ২ ছক্কা। খানিক পর কাদিরের দ্বিতীয় শিকার হন আফিফ। তার ব্যাট থেকে আসে ২০ রান।

ইনিংসের ১৫তম ওভারে দলীয় স্কোর যখন ৮০, তখন আফিফ আউট হলে ক্রিজে আসেন অধিনায়ক রিয়াদ। নাঈম-রিয়াদের ব্যাটে দলীয় স্কোর একশ রানের কোটা পার করে স্বাগতিকরা। তবে ইনিংসের ১৯তম ওভারে আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন নাঈম। ফিফটি পথে হাঁটতে থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ৪৭ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। ৫০ বলের ইনিংসটি সাজান সমান ২টি করে চার-ছয়ের মারে। যেখানে ডট খেলেন ২২টি।

শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১৪ বলে ১৩ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রানে পুঁজি পায় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের হয়ে উসমান কাদির, মোহাম্মদ ওয়াসিম সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here