খবর৭১ঃ পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলবাসীর অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে। স্বপ্নের পায়রা সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২৪ অক্টোবর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কর্ণফুলী সেতুর আদলে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের মূল আয়োজন করা হয়েছে পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার লেবুখালী সেতু এলাকায়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ফেরি পারাপারের দুর্ভোগ ঘুচিয়ে এই সেতু দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় নবদিগন্তের সূচনা করল।
পায়রা সেতুর প্রকল্পপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুল হালিম জানান, লেবুখালী পায়রা সেতুতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য পুরো সেতু সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। এ সেতুর একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, যে কোনো দুর্ঘটনায় এটি সিগন্যাল দেবে। দেশে প্রথমবারের মতো পায়রা সেতুতে যুক্ত করা হয়েছে হেলথ মনিটরিং ও পিয়ার প্রটেকশন সিস্টেম। এর ফলে যে কোনো ধরনের ওভার লোডেড (মাত্রাতিরিক্ত ভারী) যান সেতুতে উঠলে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম থেকে সিগন্যাল পাওয়া যাবে।
তিনি আরও জানান, একইভাবে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প ও বজ্রপাতসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ; যেগুলোতে সেতুর ক্ষতি হতে পারে এ ধরনের আশঙ্কা থাকলেও সিস্টেম সিগন্যাল দেবে। একইসঙ্গে কোনো কিছুর ধাক্কা থেকে রক্ষায় পিলারের চারপাশে নিরাপত্তা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এতে সেতুর স্থায়িত্ব বাড়বে।
উল্লেখ্য, বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের ২৭ কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর‘ প্রায় ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের লেবুখালী পায়রা সেতু নির্মাণের মধ্যে দিয়ে উপকূলের ৫০ লাখ মানুষের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে।
ব্রিজটি যানচলাচলে উম্মুক্ত হওয়ায় পটুয়াখালী-বরগুনা জেলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সৃষ্টি হবে অভূতপূর্ব উন্নয়ন। খুলে যাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সম্ভাবনার দ্বার।
এ সেতুর ফলে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পৌঁছতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে কুয়াকাটা পর্যটন শিল্পের। পায়রা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের পথ সুগম হবে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, কোস্টগার্ডের সিজি-বেইজ অগ্রযাত্রা, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর।
পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ ছিল শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ২০১৩ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালীর লেবুখালীতে এসে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত এ সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বিনিয়োগে ১১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয় সেতুটি। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লনজিয়াল ব্রিজ অ্যান্ড রোড কনস্ট্রাকশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।