খবর৭১ঃ
প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন চিকিৎসাতে ভেষজ ঔষধি হলুদ ব্যবহার হয়ে আসছে। আমাদের রান্নায় হলুদ ব্যবহার করা হয়। আর হলুদের যে কত গুণ তা সকলেই জানেন। সেই সঙ্গে হলুদ রোগজীবাণু প্রতিরোধ করে। সংক্রমণ ঠেকায়। আর হলুদের মধ্যে থাকা কিউকারমিন ক্যানসারও প্রতিরোধ করে। চায়ের সঙ্গে কাঁচা হলুদ কিংবা কাঁচা হলুদ দিয়ে চা, দুধ এখন অনেকেই খাচ্ছেন। টানা এক বছর ধরে এই হলুদ খেয়ে আসছেন অনেকে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে অতিরিক্ত হলুদ খাওয়া কিন্তু ঠিক নয়। কারণ অতিরিক্ত হলুদ মোটেই শরীরের জন্য ভালো নয়। এর নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। অত্যধিক হলুদের ব্যবহারে কী কী ক্ষতি হতে পারে শরীরের জেনে নিন।
হলুদ রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। তাই যাদের রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা রয়েছে (সহজে রক্ত জমাট বাঁধতে চায় না), তাদের হলুদ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভাল।
বিভিন্ন খনিজ আর লবণ জমেই বৃক্কে পাথর সৃষ্টি হয়। এদের মধ্যে সবচাইতে বেশি যে খনিজটি মেলে তা হল ‘ক্যালসিয়াম অক্সালেট’। হলুদে ‘অক্সালেট’ থাকে উচ্চমাত্রায়, যা ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বৃক্কে পাথর তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই যাদের বৃক্কে পাথর আছে বা আগে ছিল, তাদের এই মসলাটি অল্প পরিমাণে খেতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খেলে ডায়েরিয়া, হজমের সমস্যা, গা বমি বমি ভাবের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সম্প্রতি একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, হলুদ থেকে অ্যালার্জি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর ফলে ত্বকে র্যাশ দেখা দিতে পারে।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, অতিরিক্ত মাত্রায় হলুদ খেলে তা নানা ধরনের ওষুধের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিজ্ঞানীরা হলুদে থাকা কারকিউমিনকে অস্থায়ী, প্রতিক্রিয়াশীল যৌগ বলে ব্যখ্যা করেছেন। তাই, অ্যাসপিরিন, ওয়ারফারিন এবং কিছু স্টেরয়েডের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে হলুদ।
অতিরিক্ত মাত্রায় হলুদ খেলে তা কেমোথেরাপির প্রভাব নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই যাদের কেমোথেরাপি চলছে, তাদের হলুদ না খাওয়াই ভাল।
বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে দিয়ে জানাচ্ছেন যে, কখনও কখনও অত্যধিক হলুদের ব্যবহারের ফলে গলব্লাডার স্টোনের সমস্যাও দেখা দেয়। আচমকা রক্তচাপ কমে যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন অ্যালার্জির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা মহিলা কিংবা নতুন মায়েদের ক্ষেত্রেও রান্নায় অত্যধিক হলুদের ব্যবহার সঠিক নয় বলে মত পুষ্টিবিদদের।
অতিরিক্ত হলুদ। শরীর থেকে আয়রণ শোষণ করে নেয়। তখন হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। ফলে আয়রনের ঘাটতি তৈরি হয় শরীরে। হলুদের মধ্যে থাকা কিউকারমিন ভেঙে ফেরিক কিউকারমিন তৈরি হয়। যার জন্যেই অতিরিক্ত আয়রন শরীর থেকে শুষে নেয়।
হলুদের মধ্যে যে কিউকারমিন থাকে তা কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভালো। স্বাস্থ্যের দিক থেকেও উপকারী। কিন্তু বেশি হলুদ খেলে কিংবা হলুদের সাপ্লিমেন্ট খেলে শুধুই যে অ্যানিমিয়া হবে তা নয়। এর সঙ্গে রক্তপাতে সমস্যা, কিডনি স্টোন, ডায়াবেটিস এসবও কিন্তু আসতে পারে।
একজন ডায়াবেটিস রোগীকে তার খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর রেখে যেতে হয় বাকি জীবনটা। রক্তে শর্করার মাত্রা তাদের বেশি হওয়া যাবে না, কমলেও বিপদ। অপরদিকে ‘কারকিউমিন’ রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। তাই সতর্ক না থাকলে হলুদের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমে গিয়ে মারাত্বক বিপদ হতে পারে।
হলুদ খাবেন দিনে কতবার। সব কিছু একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া দরকার। যদি প্রতিদিন ২০০০-২৫০০ মিলিগ্রাম হলুদ খেতে পারেন তাহলে মাত্র ৬০-১০০ মিলিগ্রাম কিউকারমিন আপনার শরীরে যাবে। তবে এর সঙ্গে আর হলুদের কোনও সাপ্লিমেন্ট খাওয়া ঠিক নয়। সবথেকে ভালো খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নিন।