শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল : বেনাপোল রেল স্টেশন এলাকা থেকে অজ্ঞাত যুবকের ছুরিকাঘাত লাশ উদ্ধার করেছেন পুলিশ। তার বয়স আনমানিক ৩৬ বছর। মঙ্গলবার সকাল ৯টার সময় বেনাপোল রেল স্টেশনের পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করেন পোর্ট থানা পুলিশ। লাশ উদ্ধারের সময় পেটে ও বুকে ছুরিকাঘাতের চিহ্নসহ তার নাড়িভুড়ি বের হয়ে ছিলো। এসময় তার পকেট হতে একটি পাঁচ টাকার কয়েনসহ ১৫ টাকা ও একটি মাস্ক পাওয়া গেছে বলে জানালেন পোর্ট থানা পুলিশ। যশোর পিবিআই’র একটি টিম ঘটনাস্থল হতে লাশ সনাক্তের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়েছেন বলে জানালেন পিবিআই কর্মকর্তা। নাভারণ সার্কেল এএসপি জুয়েল ইমরান ও বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মামুন খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয়রা ধারণা করে বলেছেন, রাতে কে বা কারা তাকে হত্যা করে এখানে ফেলে গেছে অথবা মাদকের আখড়াখ্যাত খুবই ভয়াবহ এলাকা ভবেরবেড় গ্রামস্থ্য বেনাপোল রেল স্টেশন এলাকায় ইয়াবা সেবন করতে এসে বা এখানকার কোনও মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত যেকোন লেনদেনে বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে তাকে হত্যা করা হতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভবেরবেড় গ্রামে অবস্থিত বেনাপোল রেল ষ্টেশন এলাকার শান্তিপ্রিয় এলাকাবাসিরা বলেন, মাদকের আখড়া খ্যাত খুবই ভয়ঙ্কর এই ভবেরবেড় এলাকার প্রায় বাড়িতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে হেরোইন, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, মদ, গাজাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক সংক্রান্ত ব্যবসায়ীদের আসা-যাওয়া করতে দেখাযায়। সেসাথে বিভিন্ন এলাকা হতে এখানে উল্লেখিত মাদক সেবন করতে আসে উঠতি বয়সের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী মহল ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এখানে অতন্দ্র ব্যবসায়ীর ন্যায় দিনের পাশাপাশি রাতের আঁধার পড়ার সাথে সাথে অনেক বাড়িতে বিশেষ কায়দায় চলতে থাকে জোয়ার আসরসহ হেরোইন, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, মদ, গাজা সেবনের বিশেষ ব্যবস্থা। সেসাথে খরিদদার আকর্ষণের জন্য থাকে বিশেষ ব্যবস্থায় সুন্দরী নারীর ব্যবস্থা। যেকারণে ভবেরবেড় এলাকাটি মাদক ব্যবসার দিক থেকে যেমন বেনাপোল এলাকাসহ যশোর জেলার মধ্যে কুখ্যাতি অর্জণ করেছে তদ্রুপ জুয়ার আসর পরিচালনাসহ দেহ ব্যবসার কুখ্যাতিরও কমতি নেই বলে জানালেন স্থানীয়রা।
এখানে মাদক ব্যবসার সাথে অনেকে জড়িত এবং তাদের নামে বেনাপোল পোর্ট থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। এরা মাঝেমধ্যে সাময়িকভাবে আটক হলেও আইনের ফাঁকফোঁকড় দিয়ে বেরিয়ে এসে আবারও দেদারছে চালিয়ে যায় তাদের মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড। অনেকে আবার সারারাত চাকু ও পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। যেকারণে স্থানীয়রা এদের বিরুদ্ধে টু-শব্দটি পর্যন্ত করতে পারেনা। যেকারণে এখানে নির্ভয়ে দুর-দুরান্ত থেকে মাদক সেবন করতে আসে মাদকসেবী যুবক ও ছাত্ররা।
স্থানীয়রা আরও বলেন, ওই অজ্ঞাত যুবক হয়ত: এখানে মাদক সেবন করতে এসে কোন কারনে এসব মাদক ব্যবসায়িদের সাথে বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে হত্যার শিকার হতে পারে। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জোর আহ্বান জানান। স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে আবার ধারনা করছেন, তাকে অন্য কোথাও হত্যা করে এখানে ফেলে গেছে।
বেনাপোল রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ সিফাতুর রহমান লাশটির বিষয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমাদের পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ২০০ গজ দূরে লাশটি পাওয়া গেছে। ঘটনার স্থান রেল প্লাটফর্মের বাইরে হওয়ায় বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করেছেন বলে জানান তিনি।
বেনাপোল পোর্ট থানার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) ও এই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ জানান, লাশের নিকট থেকে একটি ৫ টাকার কয়েনসহ মোট পনের টাকা ও একটি মাস্ক পাওয়া গেছে। তার বুকে ও পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন আছে। তার নাড়িভুড়ি বের হওয়া ছিলো। লাশটির এখনও পরিচয় পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে কে বা কারা তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে।
যশোর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন কর্মকর্তা (পিবিআই)’র এসআই তবিবুর রহমান বলেন, আমরা লাশ সনাক্তের জন্য তদন্ত করছি। লাশের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হয়েছে।
বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন খান ও নাভারন সার্কেল এএসপি জুয়েল ইমরান জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরে ঘটনাস্থল হতে লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য যশোর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে অনেক বিষয়য়ে অবগত হওয়া যাবে। এসাথে এই হত্যাকান্ডের সাথে কে বা কারা জড়িত তা উদঘাটন করাসহ দোষীদের আটকপূর্বক আইনের আওয়ায় নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছি। তবে, অপরাধী যেই হোক, ধরা তাদেরকে পড়তেই হবে, কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবেনা বলে জানালেন এ কর্মকর্তাদ্বয়।