খবর৭১ঃ আগামী ৫ মাসের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রতিষ্ঠানের ভোট করতে চায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে আছে সিলেট-৩ ও কুমিল্লা-৭ আসনে উপনির্বাচন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, তিন হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ ও উপনির্বাচনও এর অন্তর্ভুক্ত। ৩৫টি পৌরসভা, ১৩ উপজেলা ও ৬২টি জেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনও আছে এ তালিকায়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে ফেব্রুয়ারির মধ্যে পর্যায়ক্রমে নির্বাচনগুলো হবে।
আজ অনুষ্ঠেয় কমিশন সভায় আলোচনার জন্য এসব বিষয় তোলা হচ্ছে। এছাড়া করোনার টিকার জন্য ১৬ বছরের নাগরিকদের নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য বিশেষ কর্মসূচির প্রস্তাব এ সভার আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাসহ বর্তমান কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে নতুন সিইসি ও কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ হিসাবে মেয়াদ ৬ মাসেরও কম সময় রয়েছে।
মেয়াদের বাকি সময়ের মধ্যে ভোটের আয়োজনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে রোববার কথা হয়। তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং যেগুলো পার হওয়ার পথে-আইনানুগভাবে ওইসব নির্বাচন শেষ করার পক্ষে আমার অবস্থান। এরমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণগুলো অগ্রাধিকার পাবে। বাকি নির্বাচন সময়মতো করা যেতে পারে। তবে কমিশন কী পদক্ষেপ নেবে তা বৈঠকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
কমিশনের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সিইসির নির্দেশনা ও তার সঙ্গে পরামর্শ করে বৈঠকের কার্যপত্র তৈরি হয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে দীর্ঘদিন পর হচ্ছে কমিশন সভা। এ সভার কার্যপত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদ শেষ হবে এমন সব নির্বাচনের তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত কমবেশি ৩৫০০ প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন করার উপযোগী হবে।
গুরুত্ব পাচ্ছে স্থগিত নির্বাচনগুলো : করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত নির্বাচনগুলো আয়োজনে বেশি গুরুত্ব পাবে কমিশন সভায়। সাতটি আলোচ্যসূচির মধ্যে তিনটিতেই আছে স্থগিত নির্বাচন আয়োজনের বিষয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন। প্রথম ধাপে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার স্থগিত ১৬৩টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট নিয়ে হবে আলোচনা। এছাড়া সপ্তম ধাপের স্থগিত ৯টি পৌরসভার ভোটগ্রহণের বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এসব নির্বাচন সেপ্টম্বরে আয়োজনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ইসি। এছাড়া প্রথম ধাপের চারটি ইউনিয়ন পরিষদের (খুলনার হরিঢালী, বাগেরহাটের খাউলিয়া ও কচুয়া এবং সুনামগঞ্জের ভাতগাঁও) চেয়ারম্যান প্রার্থীর মৃত্যুতে সেগুলোতে নতুনভাবে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করতে হবে। এ সিদ্ধান্ত আজ কমিশন সভা থেকে আসতে পারে।
মেয়াদ শেষ হচ্ছে : মেয়াদ শেষ হচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানের ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। এ তালিকায় আছে কুমিল্লা-৭ আসনের উপনির্বাচন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, ১১ আগস্ট থেকে এ করপোরেশনের নির্বাচনের সময়সীমা শুরু হয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আইনানুগ জটিলতা আছে কি না, তা জানতে চেয়ে ১২ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দিয়েছে ইসি। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর এ সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হয়। করপোরেশনের প্রথম সভা হয় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এদিন থেকেই মেয়াদ শুরু।
এছাড়া সভায় পৌরসভা নির্বাচনের বিষয় আলোচনার জন্য তোলা হচ্ছে। গত দুই বছরে সাত ধাপে ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচন করেছে ইসি। স্থগিত রয়েছে আরও ৯টি। বাকি ৮৬টি পৌরসভার মধ্যে ২০টির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে শেষ হবে। এসব পৌরসভায় নির্বাচন আয়োজনে আইনগত কোনো জটিলতা নেই বলে ইসি জানতে পেরেছে। কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত পেলেই ভোটের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করবে ইসি সচিবালয়।
দেশের ৬২টি জেলা পরিষদে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভোট হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী জানুয়ারিতে। প্রতিটি জেলা পরিষদ একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য ও ৫ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য নিয়ে গঠিত। তবে জেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনে আইনে নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এটি কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ভোট হবে।
আরও জানা যায়, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একটি করে ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের পদ শূন্য আছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ, মাগুরা জেলার মাগুরা, পাবনার ভাঙ্গুরা এবং সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার একটি করে ওয়ার্ডও শূন্য। একইভাবে ১৩টি উপজেলা ও ১৯টি জেলা পরিষদের বিভিন্ন পদে শূন্য আসন রয়েছে। সেগুলোয় নির্বাচন আয়োজন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে আজ।
নাগরিকদের তথ্য সগ্রহে বিশেষ কর্মসূচি : ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি বা এর আগে যাদের জন্ম, তাদের তথ্য সংগ্রহে বিশেষ কর্মসূচি নিতে যাচ্ছে ইসি। আগামী নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। করোনার টিকা নিতে শিক্ষার্থীসহ এ বয়সি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এর আওতায় ১৬ বছর বয়সি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের পর জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। তবে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে তারা ভোটার হবেন না। আজকের কমিশন সভায় এমনই প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। উপজেলা বা থানা অফিসে গিয়ে আগ্রহীরা নিবন্ধিত হবেন। এজন্য অনলাইন বা অফলাইনে আবেদন করতে পারবেন। তাদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের জন্য মোবাইল এসএমএস করে সময়সূচি জানানো হবে। প্রতিটি উপজেলায় গড়ে ৭০ থেকে ১০০ জন নাগরিককে নিবন্ধন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নাগরিকদের চাপ সামলাতে ও নিরাপত্তার জন্য নিবন্ধন কেন্দ্রের বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করার কথাও বলা হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালেও এ ধরনের কর্মসূচি নিয়েছিল ইসি। ওই সময়ে ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বা এর আগে যাদের জন্ম, তাদের তথ্য সংগ্রহ করেছিল। ইতোমধ্যে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে দাবি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের।